সৌদিতে ফিরলেন বাদশাহর ভাই আহমদ, নেপথ্যে কী?
সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড ঘিরে বৈশ্বিক শোরগোলের মাঝে দেশে ফিরলেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের জীবিত থাকা একমাত্র ভাই আহমদ বিন আব্দুল আজিজ।
মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস সৌদি আরবের তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে, মঙ্গলবার লন্ডন থেকে রিয়াদে ফিরেছেন সৌদি বাদশাহ সালমানের ভাই আহমদ। অনেক বিশ্লেষক বাদশাহর ভাইয়ের সৌদিতে ফেরাকে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
টাইমস বলছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১টা ৩০মিনিটে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছেছেন প্রিন্স আহমদ। বিমানবন্দরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভাতিজা ও দেশটির বর্তমান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-ও এক প্রতিবেদনে বাদশাহর ভাই আহমদের দেশে ফেরার খবর দিয়েছে। তার এই দেশে ফেরা সৌদির নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। একটি সূত্র বলছে, দেশটিতে নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি হয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, নতুবা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিকল্প হিসেবে কাউকে আনতে সহায়তা করবেন।
আরও পড়ুন : ক্ষমতা হারাচ্ছেন যুবরাজ সালমান?
সৌদি রাজপরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রিন্স আহমদ যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই তিনি দেশে ফিরতে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
মিডল ইস্ট আই বলছে, অতীতে প্রকাশ্যে বেশ কয়েকবার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা করায় দেশে ফেরার ব্যাপারে ভীত ছিলেন আহমদ।
দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে সৌদি আরবের সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা ও রাজপরিবারের সদস্যদের ধরপাকড় অভিযান শুরু করেন বিন সালমান। গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে রাজপরিবারের সমালোচক ও মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের কলামনিস্ট জামাল খাশোগি খুন হন। খাশোগি হত্যার প্রায় এক মাস পর দেশে ফিরলেন আহমদ।
এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইতোমধ্যে সৌদি আরবে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সৌদির নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় তুরস্ক ও সৌদি আরব পৃথক তদন্ত শুরু করেছে।
বাদশাহ সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স আহমদ। তার বর্তমান বয়স প্রায় ৭০ বছর। সৌদি রাজপরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে অন্যতম তিনি। বাদশাহর একমাত্র জীবিত ভাই হিসেবে সৌদি আরবে তার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
সৌদির প্রয়াত বাদশাহ আব্দুল আজিজের সাত সন্তান যারা ‘সুদাইরি সেভেন’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন; তাদের মধ্যে আহমদ এবং বর্তমান বাদশাহই কেবল জীবিত রয়েছেন। বাদশাহ আব্দুল আজিজকে আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন : খাশোগির মরদেহের খোঁজ চায় জাতিসংঘ
প্রিন্স অাহমদ সৌদি আরবের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন কয়েক দশক। পরে ২০১২ সালে অল্পদিনের জন্য দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে অবসরে যান তিনি। অবসর জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি কাটিয়েছেন লন্ডনে।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের গালফ স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক মাহজুব জাওয়েরি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে রিয়াদে প্রিন্স আহমদের ফেরাটা সৌদি আরবের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে।
এসআইএস/জেআইএম