মার্কিন ভোটে বাড়ছে মুসলিমবিরোধী প্রচার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪০ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে জোর নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এসব প্রচারণায় উঠে আসছে নানা ইস্যু। তবে এসব ইস্যুর মধ্যে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে মুসলিমবিরোধী বিষয়টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্পর্শকাতর এই ইস্যুটি বেশ প্রভাব ফেলবে মধ্যবর্তী নির্বাচনে।

সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অনেকেই সুকৌশলে তাদের প্রচার কর্মসূচিতে মুসলিমদের সম্পর্কে ভীতি ছড়াতে সচেষ্ট। বিশেষত, মুসলিম দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের সম্পর্কে মার্কিন ভোটদাতাদের বিরূপ করে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। ‘মুসলিম অ্যাডভোকেটস’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।

সংগঠনের তরফ থেকে স্কট কিম্পসন বলেছেন, প্রতিটি অঞ্চলেই মুসলিমবিরোধী প্রার্থীরা রয়েছেন। মুসলিমবিরোধী ওই প্রার্থীদের প্রায় সকলেই ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির। তারা এই ভীতি ছড়াচ্ছে।

আগামী ৬ নভেম্বর মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৫টি এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫টি আসনের মধ্যে সবকটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি, এই মিড টার্ম ভোটে ৩৬টি রাজ্য এবং ৩টি আঞ্চলিক পরিষদের গভর্নরও নিবার্চিত হবেন।

তবে স্কটের মতো উদারপন্থী মার্কিন নাগরিকদের অনেকেরই নির্বাচন ঘিরে আশঙ্কা রয়েছে। স্কটের কথায়, তথাকথিত রক্ষণশীল এলাকাগুলোর পাশাপাশি মুক্তচিন্তার অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতে মুসলিমবিরোধী প্রচার বাড়ছে।

এক সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, সিনেট, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং গভর্নর পদের প্রায় ৬৪ শতাংশ প্রার্থী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে মার্কিন ভোটদাতাদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত অবস্থানের কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে তার ধারণা।

২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে মুসলিমবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন টাম্প। হোয়াইট হাউসে প্রবেশাধিকার পাওয়ার পরে ছয়টি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছিলেন তিনি। এরপরে চলতি বছরে অবৈধ অভিবাসী পরিবারগুলোর প্রায় ২,৩০০ শিশুকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে সরকারি শিবিরে পাঠিয়েছেন। ওই সময় দেশজুড়ে প্রতিবাদ আর আদালতের হস্তক্ষেপের জেরে ট্রাম্প সরকারকে পিছু হঠতে বাধ্য হতে হয়।

কিন্তু ‘মিড টার্ম’ নির্বাচনের আগে নতুন করে ‘মুসলিম ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব’ মাথাচাড়া দিয়েছে মার্কিন মুলুকে। মার্কিন আইনসভা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব মুসলিমরা। তাদের দাবি, ৯/১১ সন্ত্রাসের পরেই মার্কিন জনমানসে মুসলিমদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। তারপর রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশের প্রচারে সেই প্রবণতা আরও প্রবল হয়েছে।

মহম্মদ নামের একজন মার্কিন নাগরিক বলেন, ‘আমজনতার মধ্যে মুসলিম-ভীতি তৈরির প্রচেষ্টা কত সহজ, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই তা প্রমাণিত হয়েছিল। এবার অনেক প্রার্থীর মধ্যেই সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যম বলছে, নর্দার্ন ভার্জিনিয়ায় সৌদি আরবের আর্থিক সাহায্যপুষ্ট ইসলামী স্কুলগুলোকে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনই একটি স্কুলের শিক্ষিকা ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যাবিগেল স্প্যানবার্জার রিপাবলিকান শিবিরের নিশানায় পরিণত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার পল রায়ানের সাহায্যপুষ্ট একটি টিভি চ্যানেল অ্যাবিগেলের বিরুদ্ধে মুসলিম মৌলবাদী কার্যকলাপে সাহায্য করার অভিযোগ তুলেছে।

সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাউস আসনের রিপাবলিকান প্রার্থী ডানকান হান্টার তার ডোমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী অম্মর ক্যাম্পা নজ্জরকে আমেরিকার নিরাপত্তার পক্ষে ‘বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ডানকানের অভিযোগ, নজ্জর সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে মার্কিন কংগ্রেসে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন! যদিও মেক্সিকান-প্যালেস্তেনীয় বংশোদ্ভূত নজ্জর আদতে একজন খ্রিস্টান!

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।