ভালোবাসার টানে কানাডা থেকে কালনায় তরুণী
কোথায় কানাডার কুইবেক আর কোথায় বর্ধমানের কালনার আশ্রম পাড়া। তবে এই সাত সাগরের দূরত্ব আদৌ বাধা হতে পারেনি টিঙ্কু আর ক্যাথরিনের চার হাত এক করতে। মাঝখানে অনুঘটকের কাজ করল যোগ ব্যায়ামের শিক্ষা।
ষষ্ঠীর দিন, পরনে লাল পাড় শাড়ি, হাতে শাঁখা-পলা, সিঁথিতে সিঁদুর; খাঁটি হিন্দু-বাঙালি রীতি মেনে আশ্রমপাড়ায় টিঙ্কুর বাড়ির উঠানে বিয়ে হল ক্যাথরিনের। যে কোনও বলিউড ছবির চিত্রনাট্যকে ফিকে করে দিতে পারে ক্যাথরিন আর টিঙ্কুর কাহিনী।
কালনার আশ্রম পাড়ায় ছোটখাটো ব্যবসা শিবানন্দ রায়ের। করোগেটেড টিনের ছাউনি দেয়া, কিছুটা মাটি, বাকিটা দরমার বেড়া দেয়া বাড়িতেই চার ছেলেকে নিয়ে বসবাস শিবানন্দ এবং দীপ্তির।
বড় দুই ছেলের সে রকম পড়াশোনা না হলেও, বেশ কষ্টে সেজ ছেলে টিঙ্কুকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়িয়েছিলেন শিবানন্দ। ২০১১ সালে দুবাইয়ের একটি হোটেলে চাকরিও পান টিঙ্কু। কিন্তু কয়েক মাস পরই সেই চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন।
তার কথায়, “হোটেলের কাজ আমার জন্য নয়। আমি তাই ছেড়ে চলে আসি।” তারপর স্থানীয় কলেজে যোগের পাঠ শেষ করে, কলকাতায় শুরু হয় যোগের শিক্ষকতা। সেই সূত্র ধরেই ২০১৬ সালে ভাগ্যান্বেষণে পৌঁছেন ঋষিকেশে।
রোববার কালনার বাড়িতে বসেই ফোনে কথা বলছিলেন বছর তিরিশের টিঙ্কু। তিনি বলেন, “ঋষিকেশে চন্দ্রা যোগ স্কুলে যোগ শিক্ষার জন্য কুইবেক থেকে এসেছিলেন ক্যাথরিন আওলেট এবং তার বোন ভ্যালেরি। সময়টা অক্টোবর ২০১৭। ওই প্রতিষ্ঠানে আমি যোগ শেখাতাম। সেই সূত্র ধরেই ক্যাথরিনের সঙ্গে আলাপ।”
আরও পড়ুন : কথা কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষে নিহত ৫৫
কথা বলার সময় টিঙ্কুর পাশেই ছিলেন ক্যাথরিন। ফোনে ভাঙা ইংরেজিতে তিনি বলেন, “সেই সময় থেকেই ধীরে ধীরে আমাদের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তার পরই আমি টিঙ্কুকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই।” কিন্তু সমাজ, দেশ, সংস্কৃতি এমনকি অর্থনৈতিক দিক থেকেও দু’জনের বিস্তর অমিল।
নব দম্পতিকে প্রশ্ন করা হয়, কী আপনাদের কাছাকাছি আনল? দু’জনের জবাব একই; আমরা দু’জনের মধ্যে নিজেদের শান্তি খুঁজে পেয়েছি। আর সেই খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের কাজ করেছে।
যোগ শিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন ক্যাথরিন। কিন্তু টিঙ্কুর স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর একই ছোঁয়া রেখে গিয়েছিলেন টিঙ্কুর মনেও। ঋষিকেশে বসেও তাই সর্বক্ষণই দু’জনের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এর পর চলতি বছরের এপ্রিলে ক্যাথরিনের দাবি মেনে কানাডা পাড়ি দেন টিঙ্কু। সেখানে ক্যাথরিনের বাবা জিলেফ এবং মা হেলেনার সঙ্গে আলাপ হয়।
কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ছিলেন তারা দু’জন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। ক্যাথরিন বাবা-মাকে জানান, তিনি বিয়ে করতে চান টিঙ্কুকে। মেয়ের ইচ্ছেতে অমত করেননি তার বাবা-মা। তবে প্রথমে ছেলের বিয়ে করায় সায় ছিল না শিবানন্দর।
শেষ পর্যন্ত গত ১ অক্টোবর হবু শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করতে টিঙ্কুকে নিয়ে আশ্রম পাড়ায় হাজির হন ক্যাথরিন। তার পর সবাইকে চমকে দিয়ে, মাথায় ঘোমটা, মুকুট পরে বিয়ের পিড়িতে হাজির হন ক্যাথরিন। বিয়ের পর এখনও ওই বাড়িতেই আছেন ক্যাথরিন।
তিনি বলেন, “এটা এখন আমারও পরিবার। আমি পুরো পরিবেশ, সবাইকে খুব উপভোগ করছি। আমার খুব ভাল লাগছে।” তবে বড্ড বিপদ হয়েছে শিবানন্দ এবং দীপ্তির। বৌমার পাল্লায় পড়ে এখন যে ইংরেজি শিখতে হচ্ছে দু’জনকেই! আনন্দবাজার।
এসআইএস/পিআর