জন্মহার বাড়াতে কাজের সময় কমালো দ. কোরিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১৬ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

একদিকে যখন ভারত ও চীনের মতো দেশগুলো জনবিস্ফোরণে চাপে রয়েছে, ঠিক তখনই উলটো পথে হাঁটছে দক্ষিণ কোরিয়া। ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশটির সরকার।

জন্মহার কমার জন্য সরকারের একটি কমিটি দীর্ঘ কাজের সময়কেই দায়ী করেছে। বলা হচ্ছে যে, স্বামী-স্ত্রীর দিনের বেশিরভাগ সময় কর্মস্থলে কেটে যাওয়ার কারণে তাদের স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর সেটাই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সন্তান উৎপাদনে। অন্য একটি মত বলছে, যেহেতু দায়িত্বশীল মা-বাবা হিসাবে তারা সন্তানকে ঠিকভাবে সময় দিতে পারবেন না, তাই তারা পরিবার বাড়াতে আগ্রহী নন। তারা সন্তানদের প্রতি অবিচার করতে চান না।

১৯৫০-৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের পর ধ্বংসপ্রায় দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৯০ সালে এসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের ২৭ নম্বরে রয়েছে দেশটি। সেখানকার বর্তমান জনসংখ্যা ৫ কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩৫ জন।

গত বছরের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মাত্র ০.৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ জনসংখ্যা বেড়েছে পৌনে দুই লাখের সামান্য বেশি। জনঘনত্বের হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র দু’জন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ২০১৬ সাল থেকে এই ধারাই অব্যাহত রয়েছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্রমহ্রাসমান হারের সমস্যার সমাধান হিসাবে অফিসের কর্মীদের সাপ্তাহিক কাজের সময় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সপ্তাহে ৬৮ ঘণ্টার পরিবর্তে এখন থেকে দেশটির চাকরিজীবীরা ৫২ ঘণ্টা কাজ করবেন। স্বাস্থ্যের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া, অবসাদ কাটানো এবং জন্মহার বৃদ্ধির জন্য এই নিয়ম জারি করেছে সরকার।

বিশ্বের কম জন্মহারের দেশগুলোর মধ্যও উপরের দিকে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সরকার বলছে, অফিসে কাজের সময় কমানোর ফলে পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন পুরুষ ও নারীরা। ফলে জন্মহার বাড়বে বলে ধারণা করছেন দেশের নীতি নির্ধারকরা।

বিশ্বের অন্যতম কর্মমূখর দেশ দক্ষিন কোরিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীরা দিনের বেশির ভাগ সময় অফিসেই কাটান। তাই কাজের সময় কমানো সংক্রান্ত একটি বিল সম্প্রতি পাস হয়েছে আইনসভায়। বিলে বলা হয়েছে, ৬৮ ঘণ্টার জায়গায় এখন সপ্তাহে ৫২ ঘণ্টা কাজ করাতে হবে। জীবনযাপনের মান উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং জন্মহার বৃদ্ধির লক্ষ্যের অংশ হিসেবে সপ্তাহের কাজের সময় কমানো হচ্ছে। ব্যবসায়ী মহল এ বিলের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু আইনসভা তাতে আমল না দিয়ে বিলটি পাস করেছেন।

২০১৬ সালে কোরীয়রা গড়ে ২ হাজার ৬৯ ঘণ্টা কাজ করেছেন। দেশের প্রেসিডেন্ট মুন জ্যা ইন বলেন, আমরা নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হব। মা-বাবার সন্তানদের আরও সময় দেওয়া প্রয়োজন। মুন প্রশাসন কাজের সময় কমানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি কর্মী নিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ৮০ ভাগ সংস্থাই বাড়তি কর্মী নিয়োগে নারাজ।

এর আগেও প্রেসিডেন্ট মুন বলেছিলেন, অতিরিক্ত কাজের সময় থাকা কখনওই উচিত নয়। সুখী জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে টানা কাজের সময় বড় বাধা। বিশ্রামের সুযোগ মেলে না। অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক কর্পোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইডিসি)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও মেক্সিকো এবং কোস্টারিকায় দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার কম জন্মহারের জন্য নারীদের অতিরিক্ত কাজ করাকে দায়ী করে সরকার। ওইসিডি এর মতে, কোরিয়ায় প্রতি একজন নারীর সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ১.২ ভাগ। যা বিশ্বে সর্বনিম্ন।

টিটিএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।