দুর্গাপূজায় যৌনকর্মীদের জীবন
‘এ তোমাদের কেমন বিচার, করোনা আর নারী পাচার’ কিংবা ‘আমিও কারোর ঘরের মেয়ে, বেচোনা আমায় অর্থ দিয়ে’ -এরকম কিছু স্লোগানে সাজানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একটি পূজা মণ্ডপ। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর ‘বাঙালি বাবু’ সম্প্রদায়ের উপপত্নী প্রতিপালন হিসেবে পরিচিত অঞ্চল ও এশিয়ার সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি সোনাগাছির যৌনকর্মীদের জীবন সংগ্রামকে তুলে ধরার প্রয়াসে এবার অভিনবভাবে মণ্ডপটি সাজিয়েছেন আয়োজকরা।
পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপূজা আয়োজনে সবসময়ই নানান বৈচিত্রতা দেখা যায়। চলতি বছরের রাজনীতি, উল্লেখযোগ্য ঘটনার প্রতিফলন দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন পূজা মণ্ডপে। কিন্তু কলকাতার আহিরিটোলার ওই পূজা মণ্ডপটি সব থেকে ব্যতিক্রমী সাজে সাজানো হয়েছে এবার।
আহিরিটোলার আয়োজক কমিটি এবারের পূজার ‘থিম’ বানিয়েছে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের জীবন সংগ্রামকে। পূজা মণ্ডপের সামনের রাস্তায় প্রায় সাড়ে তিনশ’ ফুট লম্বা একটি শিল্পকর্ম নির্মাণ করেছে তারা। এছাড়া দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয়েছে যৌনকর্মীদের জীবনসংগ্রামের নানান খণ্ডচিত্র।
রীতি অনুযায়ী যৌনপল্লির মাটি দুর্গাপূজার প্রতিমা নির্মাণ হয় না। এই প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু আহিরিটোলার এই পূজায় যৌনকর্মীদের বানানো চিত্রকর্মও স্থান পেয়েছে। কলকাতার অনেক জনপ্রিয় শিল্পী তাদের এ কাজে তাদের সহায়তা করেছেন। এছাড়া যৌন কর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোরও সাহায্য নিয়েছেন আয়োজকরা।
সমাজের প্রতি যৌনকর্মীদের দায়িত্ব কী, সেটা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্ন ছবিতে। ‘এ তোমাদের কেমন বিচার, করোনা আর নারী পাচার’ কিংবা ‘আমিও কারোর ঘরের মেয়ে, বেচোনা আমায় অর্থ দিয়ে’ মণ্ডপের দেয়ালে দেয়ালে এরকম বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের জীবন বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
পূজা উদযাপন কমিটি বলছে, যৌনকর্মীদের সংগ্রামের কথা মানুষের সামনে উপস্থাপন করার উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এই প্রথম। এর ফলে হয়ত যৌন কর্মীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে।
আয়োজকদের মধ্যে একজন বলেন, যৌনকর্মী আমাদের সমাজেরই অংশ, কিন্তু আমরা কখনো তাদের জীবন যুদ্ধের কথা জানার চেষ্টা করিনি। কোনো উৎসবে তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ, যদিও তারাও সমাজের আর দশটা মানুষের মতোই সম্মান পাওয়ার যোগ্য।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ যৌনকর্মী স্বেচ্ছায় এই পথে আসেন না। মানব পাচারকারীরা জোর করে তাদের এই পথে আসতে বাধ্য করে। এছাড়াও অনেকে আছেন, সংসারে অর্থের খুব প্রয়োজন ছিল বলে এই পথ বেছে নিয়েছেন তারা।
এসএ/আরআইপি