ট্রাম্পের হাতে ‘যৌন হয়রানির’ শিকার হয়েছেন যারা
নারীদের যৌন হয়রানির প্রতিবাদে শুরু হওয়া ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ (#me too) আন্দোলন নিয়ে বিশ্বের দেশে দেশে চলছে তোলপাড়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলাও দায়ের করেছিলেন এক মার্কিন নারী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে যেসব নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং যারা এসব ঘটনা প্রকাশ করেছিলেন তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ডয়েচে ভেলে।
স্টর্মি ড্যানিয়েলস
পর্ন স্টার স্টর্মির সাথে ট্রাম্পের সেক্স স্ক্যান্ডাল এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত। নির্বাচনের বছরে স্টর্মির সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখতে ট্রাম্পের কৌঁসুলিরা তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন। স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে যখন তার বয়স ২৬ ছিল, তখন ট্রাম্পের সাথে তার ১০ মাস প্রেম ছিল এবং এর মধ্যে একবার তাদের যৌন সর্ম্পকও হয়। আর এ ঘটনাটি চাপা রাখতেই তাকে অর্থ দেয়া হয়। তবে ট্রাম্প অবশ্য এটা অস্বীকার করেছেন।
জেসিকা লিডস
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি ভিডিও ব্লগে জেসিকা লিডস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ১৯৮০ সালের কোনো এক সময় নিউ ইয়র্কগামী একটি ফ্লাইটে পাশের সিটে বসা ট্রাম্প তার বুক চেপে ধরেন এবং স্কার্টের ভেতর দিয়ে হাত ঢোকানোর চেষ্টা করেন। সে সময় জেসিকার বয়স ছিল ৩৮ বছর।
র্যাচেল ক্রুকস
রিয়াল স্টেট কোম্পানির ‘রিসিপশনিস্ট’ হিসেবে কাজ করার সময় ট্রাম্প র্যাচেলকে বিনা অনুমতিতে সরাসরি ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে তিনি এ অভিযোগ করেন। জানান, ঘটনাটি ২০০৫ সালের এবং তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর।
সামান্হা হলভে
সামন্থা ২০০৬ সালে মিস ক্যারোলিনা হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিউটি কনটেস্টেও তিনি অংশ নেন। এনবিসি টিভির ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৬ সুন্দরী প্রতিযোগিতা চলার সময় ট্রাম্প সরাসরি প্রতিযোগীদের পোশাক বদলের কক্ষে ঢোকেন। তখন তাদের বেশিরভাগই নগ্ন ছিলেন বা বাথরোব পরেছিলেন। সিএনএনকে সামান্থা বলেন, ‘ট্রাম্প আমাদের এমনভাবে দেখছিলেন যেন আমরা এক-একটি মাংসপিণ্ড!’
সামার জারভোস
২০০৬ সালে ট্রাম্পের রিয়েলিটি শো ‘দ্য প্রিন্টিস’-এ কাজ করতেন সামার জারভোস। ২০০৭ সালে একটি কাজের ব্যাপারে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর ট্রাম্প তাকে বিছানায় যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। সামারের অভিযোগ, তিনি বিছানায় যাওয়ার ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ‘ট্রাম্প আমার কাঁধে জোরে চাপ দিয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকেন। শুধু তাই নয়, আমার বুকে দেন তিনি।’
ক্রিস্টিন অ্যান্ডারসন
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে ক্রিস্টিন বলেন, ১৯৯০ সালে একটি নাইট ক্লাবে ট্রাম্প তার স্কার্টের মধ্যে জোরপূর্বক হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। ক্রিস্টিনের অভিযোগ, ‘সে সময় তিনি আমার নীচ পর্যন্ত স্পর্শ করেছিলেন।’
লিসা বয়ানে
১৯৯০ সালে ট্রাম্পের দেয়া এক পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন লিসা। সেখানে ট্রাম্পের সামনে একটা টেবিলে তাকে নাচতে বাধ্য করা হয়। নীচে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প পোশাকে উঁকি দিয়ে ভেতরটা দেখছিলেন আর ঠিক কী দেখতে পারছেন তা অশ্লীলভাবে বলছিলেন। ‘সিক্সটিন উইমেন অ্যান্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প’ নামের এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে এসব কথা জানান লিসা।
জেসিকা ড্রেইক
পর্ন তারকা জেসিকা ড্রেইক ২০১৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন যে, ১১ বছর আগে ট্রাম্প তাকে জোর করে ধর্ষণ করেছেন।
জিল হার্থ
এক সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিজনেস পার্টনার’ ছিলেন জিল হার্থ। জিলের অভিযোগ, ট্রাম্প তার দাঁতে জোর করে চুমু খেয়েছেন, নিজের ঠোঁট বুকে ঘষেছেন এবং যৌনাঙ্গে হাত দিয়েছেন।
ক্যাথি হেলার
স্বামী, তিন সন্তান এবং শাশুড়ির সামনে ট্রাম্প তাকে চুমু খেয়েছিলেন বলে ক্যাথির অভিযোগ। ১৯৯৭ সালে ট্রাম্পের রিয়ালিটি শোতে পরিচিত হওয়ার সময় ট্রাম্প সবার উপস্থিতিতেই ক্যাথির সাথে এ কাণ্ড ঘটান।
নিনি লাকসোনেন
সাবেক মিস ফিনল্যান্ড নিনি লাকসোনেনের অভিযোগ, ডেভিড লেটারম্যানের সাথে ‘দ্য লেট শো’ নামের একটি অনুষ্ঠানের ঠিক আগে ফটোশুটের সময় ট্রাম্প তার নিতম্বে চাপ দেন।
মেলিন্ডা ম্যাকগিলিভ্রি
২০১৬ সালে মেলিন্ডা পাম বিচ পোস্ট পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৩ সালের জানুয়ারির ২৪ তারিখে একটি অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। তখন ট্রাম্প তার নিতম্বে হাত দেয়। ঘটনার সময় মেলিন্ডার বয়স ছিল ২৩ বছর।
নাতাশা স্টোয়নফ
২০০৫ সালে ‘পিপলস’ ম্যাগাজিনের ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে যান স্টোয়নফ। সে সময় ট্রাম্প তাকে বিনা অনুমতিতে চুমু খান। সাংবাদিক নাতাশার অভিযোগ, ট্রাম্প তাকে দেয়ালের সাথে জোর করে চেপে ধরেন এবং জিভটা ঠোঁটের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
টেম্পল ট্যাগার্ট
যুক্তরাষ্ট্রের উটা রাজ্যের সাবেক ‘মিস উটা’র অভিযোগ, ট্রাম্প জোর করে তাকে দু’বার চুমু খেয়েছেন। ১৯৯৭ সালের মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সময় একবার এবং ট্রাম্প টাওয়ারে আরেকবার এ কীর্তি করেন। তখন ট্যাগার্টের বয়স ছিল ২১ বছর।
কারিনা ভার্জিনিয়া
১৯৯৮ সালে ইউএস ওপেন টেনিস খেলা দেখে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন কারিনা। তখন ট্রাম্প নিজের গাড়ি থেকে নেমে কারিনার বাহু ধরেন এবং বুকে হাত দেয়ার চেষ্টা করেন।
আরএস/আরআইপি