খাশোগির আগেও নিখোঁজ হন তিন সৌদি সমালোচক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫০ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুন হয়েছেন বলে তুর্কি পুলিশের সন্দেহের তির সৌদি আরবেরই দিকে। সৌদি যুবরাজ সালমানের কট্টর সমালোচক প্রথিতযশা এই সাংবাদিক গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহর থেকে নিখোঁজ হন।

তিনি ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খুন হয়েছেন বলে ধারণা করছে তুরস্ক। অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে সৌদি আরব। এদিকে এ ঘটনায় সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সবাই সৌদির কাছেই খাশোগির নিখোঁজের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছেন।

কিন্তু খাশোগিই প্রথম রহস্যজনকভাবে গুম হওয়া সৌদি সমালোচক নন। এর আগেও বিগত কয়েকে বছরে রাজ পরিবার এবং সৌদি সরকারের সমালোচনা করায় কমপক্ষে তিনজন সৌদি নাগরিককে গুম কিংবা অপহরণ করা হয়।

তারা প্রত্যেকেই ইউরোপের কোনও না কোনও দেশে বসবাস করতেন। তাদের বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা বলছেন ওই সমালোচকদের আটক করে সৌদি আরবে জেলবন্দি করে রাখা হয়েছে। অনেকে আবার কারাগারের চেয়েও খারাপ কোনও পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন।

সুলতান বিন তুর্কি

সুলতান বিন তুর্কি নামের রাজ পরিবারের এক প্রিন্স। সৌদি নেতৃত্বের সমালোচনা করায় ২০০২ সালে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে জেনেভায় বসবাস শুরু করেন তিনি। দেশত্যাগের পরের বছর সৌদি বাদশাহ ফাহাদের ছেলে আব্দুল আজিজ বিন ফাহাদ তাকে চায়ের নিমন্ত্রণ করেন। এরপর কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলা আবশ্যক এই বলে তাকে সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু সালমান তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এর কিছুক্ষণ পর ঘরের বাইরে গিয়ে কাকে যেন ফোন করেন আব্দুল আজিজ বিন ফাহাদ। তারপর মুখোশ পরা এক ব্যক্তি এসে হঠাৎ তাকে ঘিরে ধরে। প্রচণ্ড মারধর করার পর তাকে হাতকড়া পড়িয়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। এরপর জ্ঞান ফিরলে সে দেখে তাকে একটি বিমানে করে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সুলতান বিন তুর্কি বলেন, তাকে সৌদি আরবে ৭ বছর কারাগারে অথবা গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। এরপর ২০১০ সালে চিকিৎসার জন্য তাকে বোস্টন যাওয়ার অনুমতি দেয় হয় সরকার। এরপর তিনি সুইজারল্যান্ডের একটি আদালতে আব্দুল আজিজের নামে অপহরণের মামলা করেন কিন্তু সে মামলার কোনও অগ্রগতি হয় নি।

২০১৬ সালে বাবাকে দেখতে সালমান সৌদি আরবে আসলে বিমানবন্দরেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে। এরপর থেকে তার দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটি।

তুর্কি বিন বান্দার

সৌদি রাজ পরিবারের নিরপত্তা বিভাগের প্রধান এবং পারিবারিক সদস্যদের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন তুর্কি বিন বান্দার। সৌদির রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকার ইস্যুতে খুব ছোট একটা বিষয়ে তাকে অভিযুক্ত করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

২০১২ সালে কারামুক্ত হওয়ার পর তিনি প্যারিসে যান। সেখানে তিনি সৌদি আরবের শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করে সেগুলো ইউটিউবে প্রচার করতেন। এরপর দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আহমেল আল সালিম তাকে দেশে ফিরে আসার জন্য টেলিফোন করেন। কিন্তু তুর্কি বিন বান্দারি কৌশলে সে ফোন কলটি রেকর্ড করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেন।

২০১৫ সালে তুর্কি বিন বান্দার ব্যবসায়িক সফরে মরোক্ক যাওয়ার পর নিখোঁজ হয়ে যান। তার বন্ধু ওয়ায়েল আল খালাফ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, তুর্কি বিন বান্দার সৌদি আরবে আছেন। তারা তাকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে।’

সৌদ বিন সাইফ আল নাসের

২০১৪ সালে সৌদি রাজপরিবারের ঔদ্ধ্যত এবং জুয়ার প্রতি আসক্ত হিসেবে পরিচিত ছোট পুত্র সৌদ বিন সাইফ আল নাসের ইতালিতে বসে সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে টুইট করা শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৎকালীন মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সমর্থন করায় দেশটির নেতাদের সমালোচনা করেন তিনি।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বাদশাহ সালমানকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে সৌদি প্রিন্সকে একটি চিঠি লেখেন। প্রকাশ্যে সৌদি যুবরাজকে লেখা চিঠির প্রশংসা করেন সৌদ বিন সাইফ আল নাসের। তার কয়েকদিন পরেই তার টুইটার অ্যকাউন্ট হাওয়া হয়ে যায়।

জার্মানিতে বসবাসরত আরেক সৌদি সমালোচক প্রিন্স খালেদ বিন ফারহান বিবিসিকে বলেন, প্রাইভেট একটি বিমানে মিলান থেকে রোম যাওয়ার পথে সৌদ বিন সাইফ আল নাসেরকে কৌশলে গুম করে ফেলা হয়। সৌদকে বহনকারী ওই বিমানটি রোমের পরিবর্তে রিয়াদে অবতরণ করে। বর্তমানে তাকে একটি গোপন কারাগারে রাখা বন্দী করে রাখা হয়েছে।

এসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।