বিয়ের সংজ্ঞা নির্ধারণে রোমানিয়ায় গণভোট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০১৮

একজন পুরুষ এবং একজন নারীর বিয়েই শুধু বৈধ বিয়ে - এই প্রস্তাবের ওপর হ্যাঁ-না ভোট হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায়। শনিবার ও রোববার দুই দিনব্যাপী এই গণভোটের আয়োজন করেছে দেশটির সরকার। এই গণভোটের ফলাফলে রোমানিয়ার সংবিধানে বিয়ে এবং পরিবারের সংজ্ঞা বদলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবের পক্ষের মানুষজন বলছেন, তাদের দেশের পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রাখতে সংবিধানে বিয়ের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা জরুরী। কিন্তু প্রস্তাবের বিপক্ষের লোকজন বলছেন, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়লে রোমানিয়ায় সমলিঙ্গের দম্পতি, অবিবাহিত বাবা-মা ও তাদের সন্তানদের ওপর অবিচার করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বাড়বে।

রোমানিয়ায় সমলিঙ্গের নারী-পুরুষের বিয়ে বা দম্পতি হিসাবে তাদের একসঙ্গে বসবাস স্বীকৃত নয়। এই গণভোটের ফলাফলে তার পরিবর্তনও হবেনা। কিন্তু সংবিধানে বৈধ বিয়ে এবং পরিবারের সংজ্ঞা স্পষ্ট হবে। দেশটির সংবিধানের ৪৮ ধারায় বলা আছে ‘স্বেচ্ছায় দুই সঙ্গীর মধ্যে বিবাহবন্ধনই পরিবারের ভিত্তি।’ ঐ দুই সঙ্গীকে অবশ্যই নারী এবং পুরুষ হতে হবে।

কিন্তু এখন হ্যাঁ ভোট জিতলে সংবিধানের ভাষা হবে- ‘একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে বিয়েই হবে পরিবারের ভিত্তি।’

কোয়ালিশন ফর ফ্যামিলি নামের একটি যে সংগঠন হ্যাঁ ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক মন্ত্রী মিহাই গিওর্গিও বলেন, ‘বিয়ে যে শুধু একজন নারী এবং পুরুষের মধ্যেই হতে পারে, এই বিষয়টি আমরা সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চাই।’

রোমানিয়ার সাধারণ আইনে এখনও পরিবার বা বিয়ের সেই সংজ্ঞাই রয়ে গেছে, কিন্তু কিছু মানুষ সেটি সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করতে চাওয়ার কারণেই এই গণভোটের আয়োজন করেছে দেশটি।

কিন্তু প্রস্তাবের বিরোধীরা বলছেন, পক্ষে ভোট পড়লে রোমানিয়ায় সমলিঙ্গের দম্পতি, অবিবাহিত বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের ওপর অবিচার হবে, তাদের নাগরিক এবং আর্থ-সামাজিক অধিকার হুমকিতে পড়বে।

বিরোধীরা অবশ্য এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, ‘এর ফলে সমকামীদের অধিকার এবং চাহিদার প্রশ্নে কোনো পরিবর্তন হবেনা।’

২০১০ সাল থেকে রোমানিয়ায় সমকামিতা আর কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু সমকামী দম্পতিদের কোনো অধিকার নেই। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় সমকামীদের প্রতি ঘৃণা এবং প্রকাশ্যে তাদের হেনস্থা করা হয়।

শুধু নারী ও পুরুষের মধ্যে বিয়েই বিয়ে বলে গণ্য হবে - এই প্রস্তাবের পেছনে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে রোমানিয়ায়। তবে রোমানিয়ায় জনগণের মধ্যে ভোট দেওয়ার প্রবণতা খুব কম। ২০১৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৩০ শতাংশেরও কম মানুষ ভোট দিয়েছিল।

সমালোচকরা বলছেন, শুধু নারী এবং পুরুষের মধ্যে বিয়ের ভিত্তিতে পরিবারের সংজ্ঞা নির্ধারিত হলে বিয়ে না করে যারা বাবা-মা হয়েছেন, তারা ও তাদের সন্তানরা সাংবিধানিক অধিকার হারাবেন । এছাড়াও ইউরোপীয় সংসদের ৪৭ জন এমপি রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে এক চিঠিতে লিখেছেন, পরিবারের সংজ্ঞা পুনরায় নির্ধারিত হলে বহু শিশুর প্রতি অবিচার করা হবে।

এসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।