ভূমিকম্পের পর ভুয়া খবরের সাথে লড়তে হচ্ছে ইন্দোনেশিয়াকে
বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর লণ্ডভণ্ড দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। ভূমিকম্প আর সুনামির আঘাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশটিতে। চারদিকে শুধু ধ্বংসের স্তূপ। এ অবস্থা পেতে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে যেতে যখন মরিয়া ইন্দোনেশিয়ার জনগণ, তখন চারদিকে ভুয়া সংবাদের ছড়াছড়ি। ফলে ইন্দোনেশিয়া সরকারের জন্য ভুয়া সংবাদ মোকাবেলা করা বর্তমানে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপে ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। সুনামির ফলে সৃষ্ট ছয় থেকে সাত ফুট উঁচু ঢেউ সুলাওয়েসির পালু শহরকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১৪০০ ছাড়িয়ে গেছে।
তবে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি বিশেষ করে, আক্রান্ত অঞ্চলে আবারও কয়েক দফা ভূমিকম্প হতে পারে, বাঁধ ধসে পড়ছে-এমন খবর সুলাওয়েসির বাসিন্দাদের মধ্যে আরও ভীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
জনগণকে সচেতন করতে দেশটির তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করেছে। এর মাধ্যমে এ ধরনের ভুয়া সংবাদে কান না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত যতগুলো ভুয়া সংবাদ প্রচার করা হয়, তার মধ্যে কতকগুলো হলো ভূমিকম্পে পালুর (আক্রান্ত শহর) মেয়র মারা গেছেন; পালুতে আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য বিনা খরচে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ও দক্ষিণ সালাওয়েসিতে অবস্থিত বিলি বিলি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং তা যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতকগুলো ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, এগুলো ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের ছবি। পরে সেগুলো যাচাই করে দেখা গেছে, এগুলো আসলে ২০১৪ সালের সুনামির ধ্বংসস্তূপের ছবি।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, ভুয়া খবরের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে সরকার এখন থেকে নিয়মিত ব্রিফ করবে। ব্রিফ করে জানিয়ে দেয়া হবে, কোন খবর ভুয়া।
শুক্রবার দেশটিতে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। অথচ খবর ছড়ানো হয় ৮ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। পরে দেশটির জাতীয় জরুরি সংস্থা নিশ্চিত করে ওই খবরটি ভুয়া।
পালুর অধিবাসীরা জানিয়েছেন, এরকম ভুয়া খবর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বদরুদ্দিন নামের পালুর একজন অধিবাসী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘আমি লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে আজ সকালে বেরিয়ে পড়ি। তারা একটা জায়গায় অবস্থান করছিল। এ সময় আমাদেরকে বলা হয়, আগামীকাল (শুক্রবার) ফের বড় ধরনের ভূমিকম্প হবে। আমি তাদেরকে বললাম, এটি আসলে গুজব। তোমরা যদি তাদের কথা শুনে বাড়িঘর ত্যাগ করো, তাহলে তারা তোমাদের সবকিছু চুরি করে নিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব গুজব মানুষের মুখে মুখে দ্রুত অন্যের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। যদিও বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ নেই। আমরা খুব কম লোকই ফোনগুলো বিকল্প ব্যবস্থায় চার্জ দিতে পারছি।’
ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির পর ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েশি দ্বীপের সোপুতার আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে অগ্ন্যুৎপাতে ধোঁয়া ও ছাই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্ন্যুৎপাত শুরু হওয়ার পর প্রায় চার হাজার মিটার উঁচু পর্যন্ত ধোঁয়া উড়তে শুরু করে। এর পরেই তা কমপক্ষে ৬ হাজার মিটার উচ্চতায় পৌঁছায়।
দেশটির তরফ থেকে বলা হয়, শুক্রবারের ভূমিকম্প আক্রান্ত অঞ্চল পালু শহর থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরে এ অগ্ন্যুৎপাত হয়। অথচ গুজব ছড়ানো হয়, যা বলা হচ্ছে তারচেয়ে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত কতকগুলো ভিডিও জুড়ে দেন। এতে দেখা যায়, অগ্ন্যুৎপাতের লেলিহান শিখায় আকাশ ছেয়ে গেছে।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ছাইয়ে আকাশ ছেয়ে গেছে এবং তা ক্রমশ রাস্তার দিকে ধেয়ে আসছে। পরে ভিডিও যাচাই করে জানা যায়, দক্ষিণ আমেরিকার একটি অগ্ন্যুৎপাতের ছবি এটি।
পুলিশের প্রধান মুখপাত্র ইন্সপেক্টর জেনারেল সেত্য ওয়াসিস্তোর বরাত দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত ইন্দোনেশিয়ার সংবাদ সংস্থা আনতারা নিউজ জানিয়েছে, পুলিশ এ পর্যন্ত চারজনের পরিচয় জানতে সক্ষম হয়েছে, যারা এসব গুজব ছড়াচ্ছিল। তাদেরকে খুব শিগগিরই আটক করা হবে।
এসআর/পিআর