রাখাইনে সহিংসতা মানুষের সৃষ্ট ‘মানবিক বিপর্যয়’ : সিঙ্গাপুর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:১৭ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০১৮

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাখাইনের সহিংসতায় দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে একটি তদন্ত কমিশনের তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতায় মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণ দেশটির পার্লামেন্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনের ফাঁকে অাশিয়ান জোটের মন্ত্রীরা রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে তাদের গভীর উদ্বেগের কথা জানান। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণ দেশটির সংসদে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতাকে মানুষের তৈরি মানবিক বিপর্যয় হিসেবে অভিহিত করেন।

জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলো বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতন এবং সহিংসতার কারণে গত বছর প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রাখাইন রাজ্যে ধর্ষণ এবং গণহত্যার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হয়। এই গণহত্যার জন্য দেশটির সেনাপ্রধান এবং পাঁচজন জেনারেলকে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হয়। তবে মিয়ানমার প্রতিবেদনে তোলা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সহিংসতার জন্য রোহিঙ্গাদের দায়ী করে।

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালাকৃষ্ণ বলেন, আমরা এই সহিংসতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এটা মানুষের তৈরি মানবিক বিপর্যয়। বর্তমান সময়ে এসে এ রকম সহিংসতার ঘটনা মোটেই কাম্য নয়।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সরকারকে একটা স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তদন্ত কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হোক যে, যারা এ নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিষয়ে তদন্ত করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে ওই কমিশনের হাতে।

আশিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রের ওই সভায় জোটভুক্ত ১০ দেশের মধ্যে মিয়ানমারও রয়েছে। আগামী মাসে হতে যাওয়া আশিয়ান সম্মেলনে আঞ্চলিক নেতারা যোগ দেবেন। আর এবারের আশিয়ান সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবে সিঙ্গাপুর।

মঙ্গলবার মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্য হতেকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে টেলিফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি তিনি বলেন, টেলিফোনে তিনি কোনো গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। তিনি প্রতি সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন।

চলতি বছরের জুলাইয়ে মিয়ানমার সরকার রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করে। চার সদস্যের ওই কমিশনে জাপান এবং ফিলিপাইনের দু’জন সদস্য রয়েছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে বলেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হত্যা ও ধর্ষণের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী পরিকল্পিত সহিংসতা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

কয়েকদিন আগে কানাডা সরকার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে দেয়া সম্মানজনক নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। এদিকে, মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না করলে তিনি সু চিকে কোনো সহায়তা করবেন না।

এর আগেও, আসিয়ান এক বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত মানুষকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে আনা এবং সেখানে জাতিগত সংঘাত নিরসনে গুরুত্বারোপ করা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিন্দা এবং উদ্বেগকে সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় অবস্থান বলে মনে করছেন অনেকে।

সূত্র : রয়টার্স।

এসএ/এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।