বিধ্বস্ত ইন্দোনেশিয়ায় জেল ভেঙে পলাতক ১২০০ কয়েদি
ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইন্দোনেশিয়া। বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা আট শতাধিক। এমন অবস্থায় প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে বেশ কয়েকটি দ্বীপের কারাগার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি। বিপর্যয়ের মধ্যে কারাগার ভেঙে পালিয়েছে প্রায় ১২শ কয়েদি।
সোমবার এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির আইন মন্ত্রণালয়। কার্যত মাথায় হাত পড়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। কারণ ওই বন্দিদের মধ্যে অনেক দাগী আসামিও ছিল।
ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুলাওয়েসি দ্বীপের তিনটি, পালুর একটি এবং ডাঙ্গালার একটি কারাগার। সুলাওয়েসির তিনটি জেল থেকে পালিয়েছে ৫৮১ জন কয়েদি, ডাঙ্গালার জেল থেকে পালিয়েছে ৩৪৩ জন কয়েদি। একই অবস্থা পালুর কারাগারেও।
ইন্দোনেশিয়ার আইন মন্ত্রণালয় বলছে, ভূমিকম্পের অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই কারাগারের মধ্যে পানি ঢুকতে শুরু করে। ফলে কয়েদিদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়। সেই সুযোগে অনেকে জেল ভেঙে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে এবং পালিয়ে যায়। পালুর একটি জেল থেকে পুলিশের সামনেই আসামিরা দরজা ভেঙে পালিয়েছে। ডাঙ্গালার জেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ায় আছড়ে পড়ে ভূমিকম্প ও সুনামি। লাফিয়ে লাফিয়ে এখনও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮৪৪ জনে। জোড়া বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লার।
এই ভূমিকম্প ও সুনামি মনে করিয়ে দিয়েছে ২০০৪ সালের স্মৃতি। শুক্রবার প্রথমে প্রবল ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মধ্য ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপ। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। ভূমিকম্পের পরপরই মধ্য ও পশ্চিম সুলাওয়েসিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সতর্কতা তুলে নেয়া হয়।
পালুর সমগ্র এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। ঘরছাড়া হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। খাবার ও পানির অভাব দেখা দিয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী এখনও বিপর্যস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্গতদের জন্য ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শুক্রবারের ভয়াবহ ভূমিকম্প আর সুনামির পর মঙ্গলবার সকালে আবারও জোড়া ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সাম্বা দ্বীপে পরপর দু'টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে আতঙ্কিত লোকজন রাস্তায় নেমে আসে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, মাঝারি মাত্রার দু'টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সাম্বা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ভূমিকম্পগুলো আঘাত হানে। ওই দ্বীপে সাড়ে সাত লাখ মানুষ বসবাস করে। সুলাওয়েসি দ্বীপ থেকে ১৬শ কিলোমিটার দূরে এই দ্বীপটি অবস্থিত।
প্রথমে ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর গভীরতা ছিল ৩০ কিলোমিটার। এর ১৫ মিনিট পরেই ৫ দশমিক ৯ মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্প থেকে বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
টিটিএন/জেআইএম