যৌন হয়রানির কথা জানিয়ে শাস্তি পেলেন তরুণী
যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। সাহস করে এই কথাটুকুই জানিয়েছিলেন ফেসবুকে। তাই সাজাও হয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই। তবে শাস্তি অপরাধীর হয়নি হয়েছে যৌন হয়রানির শিকার।
গত মে মাসে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী মিসরীয় তরুণী আমাল ফাথি। তিনি যে যৌন হয়রানির শিকার এবং অপরাধীর এ অবধি কোনও শাস্তি হয়নি, সে কথাটাই জানিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত কয়েকমাস বিচার চলার পর শনিবার মিসরের আদালত তাকে ভুয়া খবর ছড়ানোর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে। দু’বছরের জেল ও ১০ হাজার মিসরীয় পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে আমালকে।
আমালের আইনজীবী দোয়া মুস্তাফা জানান, আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাবেন আমাল। তবে মুস্তাফা আরও জানান, ২০ হাজার পাউন্ড দিলে আপাতত কারাদণ্ড স্থগিত রাখা হবে বলে জানিয়েছে কোর্ট। যদিও তাতে লাভ কিছু হবে কি না, তার জানা নেই। কারণ ইতোমধ্যেই অন্য একটি মামলায় নাম জড়িয়েছে আমালের। অভিযোগ, তিনি একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য। আমালের বন্ধুদের দাবি, ও মানবাধিকার কর্মী। কোনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য নয়।
আমাল পেশায় একজন অভিনেত্রীও। মে মাসের একটি ভিডিও পোস্ট করে আমাল জানিয়েছিলেন, কিভাবে একটি ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী তাকে যৌন হেনস্থা করেছেন। প্রশাসন যে মেয়েদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ, ভিডিওটিতে সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। ফেসবুকে এই পোস্টের দু’দিনের মাথায় তার বাড়িতে হানা দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। আমাল, তার স্বামী ও ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়।
পরে তার স্বামী এবং ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও আমাল বন্দীই রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ভুয়া খবর ছড়ানো ও আপত্তিকর জিনিস সঙ্গে রাখার অভিযোগে মামলা শুরু হয়। শনিবার দু’টি মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত হন আমাল। দুই মামলাতে এক বছর করে মোট দু’বছর সাজা হয়েছে তার। সঙ্গে জরিমানা। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য হওয়ার যে অভিযোগ রয়েছে, সে মামলা এখনও চলছে।
শনিবার রায়ের খবর ছড়াতে সময় লাগেনি। লন্ডনের একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে, এটি লজ্জাজনক ঘটনা। যৌন নিগ্রহের প্রতিবাদ জানানোর সাহস দেখিয়েছিলেন উনি। অবিচারের জঘন্যতম উদাহরণ এটি। যে আক্রান্ত, সেই কি না জেলে। আর অপরাধী মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, মিসরের ৬০ শতাংশ নারী জীবনে কখনও না কখনও, কোনও না কোনও ভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার। ২০১৭ সালেই একটি আন্তর্জািতক সংবাদ সংস্থা কায়রোকে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক শহরের তকমা দিয়েছে। আমালের স্বামী মুহাম্মদ লোতফি বলেন, সেটাকেই তো স্বীকৃতি দিল আদালত। যে কেউ হেনস্থা করতে পারে। অপরাধীর শাস্তি হবে না। আর নিগৃহীতার জন্য মুখ বন্ধ রাখো। না হলে জেল।
টিটিএন/জেআইএম