ইন্দোনেশিয়া যেন মৃত্যু উপত্যকা, নিহতের সংখ্যা ৪০০
ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪শ মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপে ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। সুনামির ফলে সৃষ্ট ছয় থেকে সাত ফুট উঁচু ঢেউ সুলাওয়েসির পালু শহরকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
ভূমিকম্পে একটি মসজিদসহ বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে সুনামির বেশ কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, আতঙ্কিত লোকজন ভয়ে চিৎকার করে কাঁদছে, কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় পালিয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকবার পরাঘাতের (আফটার শক) কারণে ক্রমাগত কাঁপছে সুলাওয়েসি শহর। কয়েকশ বাড়ি, হাসপাতাল এবং শপিং সেন্টার ধ্বংস হয়ে গেছে।
Indonesia geophysics agency says Sulawesi quake caused a tsunami. This video is doing the rounds. We believe it is real. pic.twitter.com/7xDzzRuj5v
— David Lipson (@davidlipson) September 28, 2018
সুনামির পর ইতোমধ্যেই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। তবে বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার কারণে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যহত হচ্ছে।
পালুর প্রধান সড়কগুলো ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রিজ ধসে পড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৮৪ জন প্রাণ হারিয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কমপক্ষে ৫৪০ জন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার লম্বোক দ্বীপে কয়েক দফা ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মধ্যে গত ৫ অাগস্টের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে লম্বোক দ্বীপেই ৪৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ ভূমিকম্পে প্রায় ৪শ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মুখপাত্র সুতোপো পুরও নুগরোহো বলেন, আমরা সঠিক তথ্য জানতে পারছি না কারণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুনামিতে ভেসে যাওয়া অনেক মরদেহ সমুদ্রের তীর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু মৃতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। তাছাড়া হতাহতের কারণ ভূমিকম্প নাকি সুনামি তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পালু এবং এর কাছাকাছি অবস্থিত ডংগালা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পালু শহরে তিন লাখের বেশি এবং দুই শহর মিলিয়ে ৬ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। ইতোমধ্যেই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, শহরের রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যহত হচ্ছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২ মিনিটে পালু সুলাবেসির ৭৮ কিলোমিটার উত্তরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাতত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পরপরই সুনামি সতর্কতা জারি করা হলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সতর্কতা তুলে নেয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো শনিবার এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সুনামি আঘাত হানার পর পালুর প্রধান বিমানবন্দরটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেখানে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাজধানী জাকার্তা থেকে কার্গো বিমানে করে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে সেনাবাহিনী।
টিটিএন/এমএস/জেআইএম