ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা
ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা
শেষ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোটাভুটিতে তৃণমূল নেতৃত্বের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে নেতৃত্ব নির্বাচনে। এ সকলই আশার দিক। সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে নিয়মিত ছাত্রদের মধ্য থেকেই। সঙ্গত কারণেই বয়সে তারা তরুণ। এই তারুণ্যই পারে আগামীর বাংলাদেশ বির্নিমাণে তাদের মূল্যবান অবদান রাখতে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-‘ওরে তরুণ, ওরে আমার কাঁচা পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।’
তারুণ্যের যে অমিত শক্তি এবং বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস সেটি যেমন আশার দিক আবার এই তারুণ্যই যদি বিপথে চলে সেটাও এক ভয়াবহ বিপদের কারণ। বর্তমানে ছাত্র নেতৃত্ব নিয়ে কিছুটা হলেও হতাশায় আছে গোটা জাতি। বিশেষ করে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে লিপ্ত থাকছে। অথচ তাদের রাজনীতি হওয়া উচিত ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক। এবং ছাত্রছাত্রীদের দাবি দাওয়ার দিকেই তারা বেশি মনোযোগী হবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন দেশের মানুষজন। কিন্তু ছাত্র নেতৃত্ব বিশেষ করে বর্তমান ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তীর। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ অনেক নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সাথেই তাদের নাম উঠে আসছে। অথচ বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া ছাত্রলীগ এক ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে রয়েছে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা।
বর্তমান ছাত্র নেতৃত্বকে সেই ঐতিহ্যের পথ ধরেই হাঁটতে হবে। জাগো নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন বেশকিছু আশার বাণী শুনিয়েছেন। সংগঠনে কেউ অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা করলে তা সহ্য করা হবে না বলে কঠোর সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন তিনি। এছাড়া অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারেও আরও সতর্ক হবে ছাত্রলীগ এমন কথা তিনি বলেছেন। যারা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবাসবে এবং ছাত্রলীগের আদর্শ যারা মনে-প্রাণে ধারণ করবে তাদেরকে দিয়ে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কোনো ঘটনা বরদাশত করা হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এসব কথায় মানুষ তখনই আশ্বস্ত হবে যখন বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাবে।
শোকাবহ আগস্ট মাস চলছে এখন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। পেয়েছি লাল সবুজ পতাকা। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের মর্যাদা দিয়ে যানটি বরং দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং ত্যাগ তিতিক্ষার চরম পরাকাষ্টা দেখিয়ে গেছেন তিনি জীবন দিয়ে। তাঁর পরিবারও রেহাই পায়নি ঘাতকের নির্মম জিঘাংসা থেকে। ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে শুধু বঙ্গবন্ধুর নামে শ্লোগান দিলেই হবে না। বরং যে দেশপ্রেম এবং অনাড়ম্বর জীবনের দীক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন সে পথেই হাঁটতে হবে। মানুষের প্রতি তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিশ্বাস হারাননি। ছাত্রনেতৃত্বও যদি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে চায় তাহলে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ীই তাদের কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনাই যদি ছাত্রলীগের শেষ ঠিকানা হয়ে থাকে তাহলে ‘অস্ত্র নয়, কাগজ কলমই ছাত্রদের হাতে শোভা পায়’ তার এই মন্ত্রে বিশ্বাস রাখতে হবে। নতুন নেতৃত্ব আর কোনো বিতর্কে জড়াবে না এবং ভবিষ্যত বাংলাদেশকে তারা নেতৃত্ব দিয়ে সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত করবে- এই নিঃস্বার্থ মানসিকতা তাদের কাছে প্রত্যাশা করে দেশের মানুষ। ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধে ওঠে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। পূর্বসূরিরা যে পথে হেঁটে ছাত্রলীগকে জনমানুষের সংগঠনে পরিণত করেছেন সেই ঐহিত্যের পথেই তাদের হাঁটতে হবে।
এইচআর/পিআর