বৃদ্ধা মাকে বারান্দায় ফেলে বউকে নিয়ে বেড়াতে গেল ছেলে
রায়মণিদেবী। ৬৮ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা চারদিন ধরে শুধু মুড়ি ও পানি খেয়ে বেঁচে আছেন। ঘরে ঘুমাবেন তারও উপায় নেই। কারণ ঘরের দরজায় তালা ঝুলানো। অগত্যা বারান্দায় দিন কাটছে তার। ঘরে তালা মেরে ছেলে ও ছেলের বউ বেড়াতে যাওয়ায় এ করুণ পরিণতির শিকার হয়েছেন এই বৃদ্ধা। ভারতের ২৪ পরগণার বারাকপুরের এ ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২৪ পরগণার টিটাগড় থানার অন্তর্গত বারাকপুর পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়ানিবাস খালপাড় এলাকায় ওই বৃদ্ধার বাড়ি। তার তিন ছেলে। রায়মণিদেবী ছোট ছেলের সংসারেই থাকতেন। ছেলে রতন ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী স্বাতী ভট্টাচার্য স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করে। গত বৃহস্পতিবার ওই দম্পতি ঘরে তালা মেরে মাকে খোলা বারান্দায় একা ফেলে অসমে বেড়াতে গেছেন। চারদিন ধরে সেই বারান্দাতেই বৃদ্ধার দিন কাটছে। সঙ্গে কিছু মুড়ি ও এক বোতল পানি থাকায় কোনো রকমে গলা ভিজিয়ে তিনদিন কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ভট্টাচার্যবাড়িটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। তাই প্রতিবেশীরা জানতে পারেননি যে, রায়মণিদেবী বারান্দাতে থাকছেন। শনিবার বেলার দিকে কোনোভাবে এক পড়শি গৃহবধূর চোখে পড়ে যান ওই বৃদ্ধা। বৃদ্ধাকে দেখতে পেয়ে প্রাচীরের দরজা খুলে ভিতরে আসেন ওই গৃহবধূ। জানতে চান, তিনি বারান্দায় একা একা কী করছেন। তার এ কথাতেই কেঁদে ফেলেন ওই বৃদ্ধা।
তিনি জানান, ছেলে-বউমা গত বৃহস্পতিবার তাকে বারান্দায় রেখে ঘরে তালা দিয়ে অাসামে বেড়াতে গিয়েছে। এই ঘটনায় যারপরনাই অবাক হয়ে যান ওই গৃহবধূ। তিনি অন্যান্য বাসিন্দাদের ডাকেন। গুণধর ছেলের কীর্তি শুনে ততক্ষণে ক্ষোভে ফুটছেন প্রতিবেশীরা। তড়িঘড়ি তার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
শিক্ষক দম্পতির এ কীর্তির খবর স্কুলে পৌঁছাতে সময় নেয়নি। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন অন্যান্য শিক্ষকেরা। তারাই রায়মণিদেবীকে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে নিয়ে যান। সেখানে ছেলে-বউমার এমন অনাচারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান ওই বৃদ্ধা। এরপর টিটাগড় থানাতেও অভিযোগ দায়ের হয়।
স্কুলের দুই শিক্ষকের এই আচরণে হতবাক অন্যান্য শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক নিজেই রতনকে ফোন করেন। অভিযোগ বহুবার ফোন দেয়ার পর রীতিমতো বিরক্তি নিয়েই কথা বলে রতন ভট্টাচার্য। বলেন-‘তারতো আরও দুই ছেলে রয়েছে, তাদের কাছেও তো যেতে পারত।’ এই বলেই ফোন কেটে দেয় সে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধার আরও দুই ছেলে রয়েছে। তারা ইছাপুরে থাকে।
প্রতিবেশীর বাড়িতে ভরপেট খেতে পেয়ে ততক্ষণে কেঁদে ফেলেছেন বৃদ্ধা। সেখানেই আপাতত আশ্রয় মিলেছে তার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছেলে-বউমার সংসারে নিত্য গঞ্জনায় দিন কাটে তার। উঠতে বসতে কথা শোনানোর পাশাপাশি পান থেকে চুন খসলেই অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে বউমা। গোটা ঘটনায় দর্শকের ভূমিকা নেয় ছেলে। আমি যে কীভাবে বেঁচে আছি তা শুধু ভগবানই জানেন।
এসআর