গভীর সমুদ্রে যেভাবে জীবন বাঁচায় কনডম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩৫ এএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

যৌন সুরক্ষায় বহুল ব্যবহৃত কনডম কেনিয়ার জেলেদের বাঁচার মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্দর নগরী মোম্বাসাতে যে মৎস্যজীবীরা নিয়মিত সমুদ্রে মাছ ধরতে যান, তাদের মধ্যে কনডমের ব্যবহার হঠাৎ করে খুব বেড়ে গেছে। মূলত গভীর সমুদ্র থেকে যোগাযোগের মাধ্যম মোবাইল ফোনকে সুরক্ষার দেয়ার জন্যই তারা কনডমের দিকে অতিমাত্রায় ঝুঁকে গেছেন।

আলি কিবওয়ানা মোয়াতেলা মোম্বাসার একজন জেলে। তাকে মাছ ধরতে প্রতি সপ্তাহেই ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে হয়। তিনি কনডম ব্যবহার প্রসঙ্গে বিশদ বর্ণনা দেন। তিনি প্রথমে কনডমের প্যাকেটটি খুলে ফেলেন। এরপর নিজের টি-শার্টে ঘষে ঘষে কনডমের গায়ের লুব্রিক্যান্ট বা পিচ্ছিল পদার্থটা তুলে ফেলে কনডমকে শুকনো করে ফেলেন। তারপর সেই শুকনো কনডমটা দিয়ে জড়িয়ে ফেলেন নিজের মোবাইল ফোন। এবার ওপরে বেলুনের মতো একটা গিঁট মেরে মোবাইলকে ওয়াটারপ্রুফ করে নেন।

এভাবে কনডমে জড়িয়ে নিলেই জেলেদের মোবাইল ফোনগুলো ওয়াটারপ্রুফ হয়ে যায়। ভারত মহাসাগরের ঢেউ আছড়ে পড়লেও পানি ঢুকে মোবাইলগুলোর কোনো ক্ষতি হয় না। সমুদ্রে কেনিয়ার জেলেদের সুরক্ষার যেহেতু কোনো গ্যারান্টি নেই, তাই মোবাইল ফোন চালু থাকলে উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগে ভীষণ সুবিধা হয়।

আলি মোয়াতেলা নামে একজন জেলে বলেন, ‘আমাদের নৌকা প্রায়ই উল্টে যায়, কিন্তু কনডমে মোড়ানো থাকলে মোবাইলগুলোর অন্তত কোনো ক্ষতি হয় না। আমরা গরিব মানুষ, বিপদে মোবাইলগুলো বাঁচানোর এই সহজ ও সস্তা উপায়টা আমরাই মাথা খাটিয়ে বের করেছি।’

‘মোবাইল চালু থাকলে সাগর থেকেই ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। একটা সময় ফিক্স করে আমাদের মাছ সোজা এনে সৈকতে খদ্দেরের কাছে বেচেও দিতে পারি। এমনকি নৌকাডুবি হলেও উদ্ধারকারী যানকেও মোবাইল থেকে সঠিক লোকেশন পাঠাতে পারি। কাজেই কনডমই আমাদের মোবাইলগুলো বাঁচিয়ে দিয়েছে!’-জানান মোয়াতেলা।

আরেকজন মৎস্যজীবী জাফারি মাতানো। বছরকয়েক আগে সমুদ্রে তাদের নৌকা উল্টে গেলে তার সঙ্গী আরও চারজন জেলে ডুবে গেলেও তিনি রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় দশ ঘণ্টা ধরে সারারাত একটানা সাঁতরে তিনি কোনো ক্রমে পাড়ে এসে ওঠেন।

জাফারি বলেন, ‘আমাদের নৌকা যখন উল্টে যায়, তখন গভীর রাত। বেলা এগারটা নাগাদ আমাদের তীরে এসে ভেড়ার কথা ছিল। প্রচণ্ড ঢেউয়ে নৌকার মোট ছয়জন জেলেই আমরা পানিতে পড়ে যাই।’

‘বিরাট ঢেউ ঠেলে আমি আর আমার এক বন্ধু যে কীভাবে সাঁতরে পাড়ে এসেছিলাম ভাবাই যায় না। আমাদের বাকি চারজন মারা গিয়েছিল- অথচ সেদিন মোবাইল ফোন চালু থাকলে ওরাও হয়তো বেঁচে যেতে পারত!’-মন্তব্য জাফরির।

বউ যখন ভুল বোঝে

তবে কনডম এভাবে জেলেদের জীবন বাঁচালেও এর কিন্তু অন্য একটা বিচিত্র সমস্যাও আছে। আলি মোয়াতেলা জানান, অনেক সময় এই কনডমগুলো ভুল করে আমাদের পকেটেই রয়ে যায়। আর বাড়িতে সেটা দেখে ফেললেই সর্বনাশ! বউ জানতে চায়- এই কনডম তোমার কাছে কেন, এগুলো দিয়ে কী কর? এসব নিয়ে বউয়ের সঙ্গে তুলকালাম শুরু হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘বউকে যতই বলি এগুলো আমরা অন্য কাজে ব্যবহার করিনি, আমাদের পেশার কাজে লাগে - কে শোনে কার কথা! শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কনডম জড়িয়ে পুরো ব্যাপারটা দেখানোর পর অবশেষে শান্তি আসে।’

সূত্র: বিবিসি

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।