শোকজ শুনানি : জনকণ্ঠের রায় ১৩ আগস্ট


প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ১০ আগস্ট ২০১৫

দৈনিক জনকণ্ঠের আদালত অবমানার বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৩ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওইদিন জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সোমবার সকাল ৯টা থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় ঘোষণার আগেই দৈনিক জনকণ্ঠ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা আদালত অবমাননার শামিল। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে রায়কে প্রভাবিত করা হয়েছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।

এ সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘বিচারপতিদেরও একটা ইথিকস (নীতি) আছে। এর বাইরে একজন বিচারপতি যেতে পারেন না। প্রধান বিচারপতি সারা দেশের বিচারপতিদের সঙ্গেই বিচারিক কাজের স্বার্থে ভাই বোনের মতো কথা বলে থাকেন। কিন্তু তা মোবাইলে রেকর্ড করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার মতো বিষয় সাংবাদিকতার ইথিকসে পড়ে না। প্রধান বিচারপতি অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে কথা বলবেন এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।’
 
এ সময় জনকণ্ঠের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন আদালতকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মোবাইলে যে কনভারসেশনটা (কথোপকথন) হয়েছে এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ বিচারপতিদের ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে ইন্টারফেয়ার (হস্তক্ষেপ) করার অধিকার আপনাদের নেই। এভাবে চললে প্রধান বিচারপতি তো কারো সঙ্গেই কথা বলতে পারবেন না। তাহলে বিচারাঙ্গণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? প্রধান বিচারপতি মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীদের মতো না যে তিনি শেখ হাসিনার সরকারের ইচ্ছায় ব্যবহার হবেন।’ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আগামী ১৩ আগস্ট আদালত অবমাননা রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।

আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন, জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে আদালত অবমানার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। এখানে একজন বিচারপতিকে নিয়ে বলা হয়েছে। পুরো বিচার বিভাগ আপিল বিভাগ হাইকোর্টে কোন কিছুকে জড়িয়ে কথা বলা হয়নি। আমি আশা করি সত্য কথা বলা আদালত অবমাননা নয়। আমি আশা করি সুপ্রিম কোর্টে ন্যায় বিচার পাব।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় ঘোষণার আগেই দৈনিক জনকণ্ঠ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা আদালত অবমাননার শামিল। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে রায়কে প্রভাবিত করা হয়েছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই আমি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছি।

তিনি বলেন, একজন বিচারপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতির কথার যে রেকর্ড করা হয়েছে তা শুধু আদলত অবমানাই নয় এটি তথ্য-প্রযুক্তি আইনেরও বিরোধী।

রোববার সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়ের আদালত অবমানার জবাব দাখিলের শুনানি আপিল বিভাগের বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানিতে জনকণ্ঠের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সালাহ উদ্দিন দোলন। অপরদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

গত ২৯ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে তলব করে স্বপ্রণোদিত আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আদালত অবমাননার দায়ে কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না-তাদেরকে ৩ আগস্ট হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী তারা ওই দিন হাজির হয়ে জবাব দাখিলে সময় প্রার্থনা করেন।

গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে ‘সাকার পরিবারের তৎপরতা/পালাবার পথ কমে গেছে’ শিরোনামে উপসম্পাদকীয় লেখেন স্বদেশ রায়। সে লেখায় সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কথা উল্লেখ করা হয়। সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।
 
২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর আপিলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার রায়ের পরপরই জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে তলব করে আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে জনকণ্ঠের এ দুই সাংবাদিককে কেন দণ্ড দেওয়া হবে না, এ মর্মে রুল জারি করেন আদালত।
 
এফএইচ/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।