সমাজ থেকে নৈতিকতা মানবতা বিলীন হতে চলেছে


প্রকাশিত: ০৯:২৬ এএম, ১০ আগস্ট ২০১৫

জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান বলেছেন, সমাজ থেকে নৈতিকতা মানবতা স্নেহ মায়া মমতা বিলীন হতে চলেছে। সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখন ভীষণ আত্মকেন্দ্রিক। নিজের বাইরে কাউকে নিয়ে ভাবতে চায় না।

সম্প্রতি দেশব্যাপী শিশুর প্রতি অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধির প্রতিবাদে সোমবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনার ফলে মানুষের বিবেকের চরম অবক্ষয় ঘটছে। চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখেও প্রতিবাদ করছে না, এগিয়ে আসছে না।

তিনি ঘরে বাইরে শিশুদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে এবং মানুষের মানবিকতাবোধ পুণরুদ্ধারে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারী শিশু চিকিৎসক ও চিকিৎসক নেতারা বলেন, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ কনভেনশন অন দি রাইটস্ অব দ্য চাইল্ড (সিআরসি) অনুমোদন দেয়া থেকে অদ্যাবদি শিশু অধিকার নিশ্চিত হয়নি। প্রতি বছরই শিশুদের ওপর নির্যাতন এমনকি হত্যার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।  
সম্প্রতি কতিপয় হৃদয়হীন, মানবিকতা বিবর্জিত ও ঘৃণ্য ব্যক্তি ছোট ছোট শিশুদের সামান্যতম কারণে নির্মমভাবে অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করছে।

এ সময় তারা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।

বিপিএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, শিশুর প্রতি যে ধরনের অত্যাচার চলছে তা জাতির জন্য কলংকজনক। একদিকে শিশুদের আগামী দিনের ভবিষ্যত বলি হচ্ছে অন্যদিকে সামান্যতম কারণে নির্মমভাবে অত্যাচার করে মেরে ফেলা যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুততার সাথে নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি শিশুদের প্রতি সব ধরনের অত্যাচার বন্ধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বিপিএ মহাসচিব এম এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, শিশুদের চিকিৎসা দেয়ার মাধ্যমে সুস্থ্যতা দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু যখন তাদের অত্যাচারিত হতে দেখি তখন কষ্ট লাগে। বিশ্বের অন্য কোন দেশে শিশুদের প্রতি এতো নির্যাতন হয় না।

তিনি শিশুদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

বারডেম হাসপাতালের মহাপরিচালক শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার বলেন, শিশুসহ সকল ধরনের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করতে পরিবার থেকে আন্দোলন শুরু করতে হবে। যে কোন শিশু অত্যাচারিত হওয়ার পর মিডিয়া তৎপর হলেও পরবর্তীতে সেখানে ফলোআপ প্রতিবেদন সঠিকভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত হয় না।



শিশু অত্যাচার বন্ধে মিডিয়া গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বিপিএর কর্মসূচীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, শিশুদের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য সমাজ গড়ে তোলা সকলের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিশুদের প্রতি অত্যাচার বন্ধে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
 
শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য শিশু স্বাস্থ্য সমিতি এখন থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করে শিশু বিশেষজ্ঞ এম কিউ কে তালুকদার বলেন, শুধু শিশুর চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধে নয়, শিশুদের সার্বিক বৃদ্ধি, বিকাশ পুষ্টি ও অধিকার রক্ষায় সমাজের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

শাহবাগে বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে অন্যান্যদের মধ্যে আরো অংশ নেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক এমএফ এইচ নাজির, অধ্যাপক মুনিমুল হক, অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।

এমইউ/আরএস/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।