যশোর রোডের গাছ কাটার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট
চলতি বছরের শুরুর দিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশ সরকারকে সরে আসতে হয় যশোর রোডের বাংলাদেশ অংশের গাছ কাটার সিদ্ধান্ত থেকে। তবে এবার কোপ পড়ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অংশে।
শর্তসাপেক্ষে ঐতিহাসিক যশোর রোডের গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জ্যোর্তিময় ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। শর্ত দেয়া হয়েছে- একটি গাছ কাটলে লাগাতে হবে পাঁচটি গাছ।
ভারতের ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কে বারাসাত থেকে বনগাঁর মধ্যে রাজ্য সরকার পাঁচটি রেল ওভারব্রিজ তৈরি করতে চায়। ওই কাজ করতে গেলে ৩৫৬টি গাছ কাটার প্রয়োজন। কিন্তু যশোর রোডের ধারে থাকা ওই গাছগুলো কাটতে দিতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন।
সেই সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি এপিডিআর-এর পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। শুক্রবার সেই মামলার রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, রাজ্য সরকার ওই ৩৫৬টি গাছ কাটতে পারবে। তবে যতগুলো গাছ কাটা হবে, তার পাঁচগুণ গাছ লাগাতে হবে রাজ্য সরকারকে।
তবে এ রায় এখনই কার্যকর হচ্ছে না। বরং তা প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিত করে দিয়েছে। আর তা করা হয়েছে মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর আবেদনের ভিত্তিতে। তিনি আদালতে জানান, তারা একটি গাছ কাটারও বিরুদ্ধে। তাই এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন জানাবেন। এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশের আবেদন জানান তিনি।
ওই আবেদন মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী তিন সপ্তাহের জন্য এই রায় স্থগিত থাকবে বলে আদালত জানিয়েছে।
এরআগে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য চলতি বছর ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ৬ জানুয়ারি যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তিনজন সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসকসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় যশোর রোড (যশোর-বেনাপোল) মহাসড়ক প্রশস্তকরণে ২ হাজার ৩১২টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তারপরই পরিবেশবাদী ও স্থানীয়রা গাছ রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। গাছ কাটার পক্ষেও কর্মসূচি পালন করে কয়েকটি সংগঠন। বিষয়টি আদালতে গড়ালে ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট শতবর্ষী গাছগুলো না কাটার জন্য ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেয়। মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিস্মারক হিসেবেও গাছগুলোর সাথে আবেগ জড়িয়ে আছে। এই ‘যশোর রোড’ দিয়েই ভারতে গিয়েছিলেন শরণার্থীরা।
কেন যশোর রোডের গাছ বিখ্যাত
এই মহাসড়কটি ঐতিহাসিকভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে যশোর পর্যন্ত বিস্তৃত।
ব্রিটিশ শাসন আমলে যশোর শহরে একটি বিমানঘাঁটি ছিল। ফলে সেই সময় এই বিমানঘাঁটির সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি করার জন্য যশোর রোডের আধুনিকভাবে নির্মাণ করা হয়।
সেসময় অনেক গাছ লাগানো হয় রাস্তার দুপাশে। বর্তমানে যশোর রোড বলতে দমদম থেকে বনগাঁ এর পেট্রোপোল সীমান্ত পর্যন্ত মহাসড়ককে বোঝায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই যশোর রোড দিয়েই লাখ-লাখ শরণার্থী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। শরণার্থীদের সেই ঢল নিয়ে বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' নামে একটি কবিতা লেখেন।
পরবর্তীতে গায়ক বব ডিলান এবং অন্যদের সহায়তায় সেই কবিতাকে তিনি গানেও রূপ দিয়েছিলেন।
সূত্র : কলকাতাটুয়েন্টিফোর ও বিবিসি।
এনএফ/এমএস