করুণানিধির শেষকৃত্যে জনতার ঢল, পদদলনে নিহত ২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০১৮

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত করুণানিধির শেষকৃত্যের আগে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে পদদলিত হয়ে অন্তত দুই জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে ৩০ জন। এর আগে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তামিল রাজনীতির জনপ্রিয় মুখ করুণানিধি।

বুধবার চেন্নাইয়ের রাজাজি হলে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ডিএমকে দলীয় সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের ঢল নামে। কিন্তু হলের মধ্যে যে পরিমাণ জায়গা, সেই তুলনায় লোক সমাগম কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা একটি নির্দিষ্ট পথ দিয়ে ভেতরে ঢোকাচ্ছিলেন আগত মানুষজনকে। কিন্তু হলের বাইরের দিকে ভিড় এতটাই বেড়ে যায় যে পুলিশের সেই ব্যারিকেড ভেঙে যায়।

ওই ভবনের প্রাচীর বেয়ে উপরে উঠতে দেখা যায় অনেককে। সবাই হলের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করতেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। তখনই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

ডিএমকে বলছে, বিকেলে রাজাজি হল থেকে করুণানিধির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মেরিনা বিচের আন্না স্কয়ারে। এই তিন কিলোমিটার রাস্তা ইতিমধ্যে জনসমুদ্রের চেহারা নিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের আশঙ্কা, অন্তিম যাত্রা শুরু হলে সেই সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হবে।

এর আগে তামিল রাজনীতির জনপ্রিয় মুখ করুণানিধির শেষকৃত্য কোথায় অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তা আদালতে গড়ায়। মাদ্রাজের হাইকোর্ট মেরিনা বিচেই করুণানিধির শেষকৃত্যের অনুমতি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়ে দেয়।

আদালতের রায় পাওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন করুণানিধি পুত্র এম কে স্ট্যালিন। রাজাজি হলে মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়ের খবর পৌঁছতেই কান্নায় মুখ ঢাকেন তিনি। তাকে জড়িয়ে স্বান্তনা দেন ডিএমকে নেতা এ রাজা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজাজি হলে গিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

নজিরবিহীনভাবে মঙ্গলবার মধ্যরাতে শুনানি শুরু হলেও তা শেষ হয়নি। অবশেষে বুধবার সকালে আদালত জানিয়ে দেয় মেরিনা সৈকতে আন্না মেমোরিয়ালেই করুণানিধিকে সমাধিস্থ করা যাবে। বুধবারই সম্পন্ন হবে প্রয়াত ডিএমকে প্রধানের শেষকৃত্য। আদালতের রায়ে স্বাভাবি ভাবেই মুখ পুড়েছে তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে সরকারের।

তামিলনাড়ুর প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মরদেহ শায়িত রাখা হয়েছে রাজাজি হলে। সেখানেই শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন রাজনীতি, সিনেমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনরা। মঙ্গলবার চেন্নাই পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিএমকে প্রধানের মৃত্যুতে বুধবার সংসদে শোক প্রস্তাবের পর দিনের মতো মূলতবি হয়ে যায় সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন।

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, মঙ্গলবার তামিলনাড়ু সরকার মেরিনা বিচে করুণানিধির সমাধিস্থল তৈরির অনুমতি না দেয়ার পর আদালতের দ্বারস্থ হয় ডিএমকে। মধ্যরাতে শুনানি শুরু হয় বিচারপতির বাড়িতে। কিন্তু রাতে শুনানি শেষ হয়নি। এ দিন সকালে বিচারপতি জানতে চান, জয়ললিতার সমাধির ক্ষেত্রে কি অনুমোদন নেয়া হয়েছিল। সেই অনুমোদনের নথিও দেখাতে বলে আদালত। কিন্তু তা দেখাতে পারেনি সরকার।

এর পরই আদালত মেরিনা সৈকতে আন্না সমাধিস্থলেই করুণানিধির শেষকৃত্যের অনুমতি দেয়া হয়। তামিলনাড়ুর পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যরা চেয়েছিলেন, মেরিনা সৈকতে আন্না মেমোরিয়াল অর্থাৎ প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সি এন আন্নাদুরাইয়ের সমাধির কাছেই অন্তিম শয্যায় শায়িত রাখা হোক করুণানিধিকে।

কিন্তু তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকে সরকার সেই অনুমতি দিতে রাজি হয়নি। সরকারের যুক্তি ছিল, যে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সমাধি রয়েছে মেরিনা বিচে, তারা পদে থাকাকালীন মারা গিয়েছিলেন। এছাড়া ওই এলাকায় সমাধিস্থল তৈরি বন্ধের দাবি নিয়ে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন।

এরপরই মাদ্রাজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ডিএমকে। মধ্যরাতে সেই মামলার শুনানি শুরু হয় মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হুলুভেলি জি রমেশের বাসভবনে। কিন্তু রাতে শুনানি শেষ হয়নি। বুধবার সকাল আটটা থেকে ফের শুনানি শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, গান্ধী মণ্ডপমে দু’একর জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে করুণানিধির সমাধিস্থলের জন্য। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত জানিয়ে দেয়, মেরিনা সৈকতে করুণানিধিকে সমাধিস্থ করা যাবে। নৈতিক জয় পেয়ে এবার অন্তিম সমাধির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ডিএমকে।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।