ভোটার তালিকা হালনাগাদের লক্ষ্যপূরণ নিয়ে সংশয়
ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে নানান সমস্যায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ইসির গাফলতি ছাড়াও যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্বিপাক। পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ বিষয়ে প্রচার চালানো হয়নি। ফলে তথ্য সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের মাঠ কর্মকর্তারাও সংশয় প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ১৮৯ উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বৃষ্টি আর বন্যা শুরু হয়। কোথাও কোথাও দেখা দেয় বন্যা। রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যায়। এজন্য অধিকাংশ উপজেলায় তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি যেতে পারেননি। ৯ আগস্ট রোববার প্রথম পর্যায়ের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সবার তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। তবে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের সময় আরো বাড়ানো হতে পারে বলে জানা যায়।
সম্প্রতি জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে ইসিতে পাঠানো অধিকাংশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা বৃষ্টি আর বন্যার কারণে প্রথম পর্যায়ে অধিকাংশ এলাকায় বাড়ি বাড়ি যেতে পারেননি তথ্য সংগ্রহকারীরা। সেই সঙ্গে এলাকায় পর্যাপ্ত প্রচার চালানো সম্ভব হয়নি। তবে সীমিত আকারে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমির খসরু গাজী জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। টার্গেট অনুযায়ী সব বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হবে না।
ফেনীর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, বন্যার কারণে পুরো জেলার হালনাগাদ কাজ থমকে গেছে। এ অবস্থায় তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি যেতে পারছেন না।
একই অবস্থার কথা জানিয়েছেন- নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা।
২৫ জুলাই সারা দেশে ৭২ লাখ নতুন ভোটারের টার্গেট নিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করে ইসি। প্রথম পর্যায়ে ১৮৯ উপজেলায় তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এটি চলবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত। এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে যারা ভোটারযোগ্য হচ্ছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অর্থাৎ যাদের জন্ম ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে হয়েছে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এবারই প্রথম যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছর হয়েছে সেসব নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করছে কমিশন। দেশের ৫১৪ উপজেলায় তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রম চলবে। ৯ আগস্ট প্রথম ধাপ শেষে ১৬ আগস্ট থেকে ১৮৪ উপজেলায় এবং ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪১ উপজেলায় কাজ শুরু হবে। বর্তমানে ৯ কোটি ৬২ লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়।
এদিকে তথ্য সংগ্রহের জটিলতা বিবেচনা করে এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদে ৪৭টি দুর্গম এলাকা চিহ্নিত করেছে কমিশন। উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকাসহ ১৬ জেলার এই ৪৭ উপজেলা চিহ্নিত করে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
পাশাপাশি এসব উপজেলায় ইসির নিজস্ব নজরদারি ছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। একই সঙ্গে তথ্য সংগ্রহকারীদের এসব উপজেলায় যোগাযোগের জন্য বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে ইসি।
এইচএস/এসএইচএস/এমআরআই