অনুপ্রবেশ ইস্যুই এখন পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হাতিয়ার
আসামের মতোই পশ্চিমবঙ্গে এখন প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ। দেশটির শীর্ষ আদালতের নির্দেশনা মেনেই আসাম সরকার দুই দফায় তাদের নাগরিক তালিকা থেকে প্রায় দেড় কোটি ভোটারকে বাদ দিয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ বাদ যাওয়া এসব মানুষ বাঙালি এবং দেশ ভাগের সময় তারা পূর্ববঙ্গ থেকে আসামে বসতি গড়েছিলেন।
আসামের পর ত্রিপুরা, বিহারেও একইভাবে নাগরিক তালিকা সংশোধনের কাজ হতে পারে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। যদিও সরকারিভাবে এখনো কোনও ঘোষনা আসেনি। তবে বিজেপি শাসতি হলেও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব নাগরিক তালিকা সংশোধন করতে নারাজ। যদিও সরকারের জোটসঙ্গীরা বলছে, আসামের মতোই রাজ্যটির ভৌগলিক অবস্থা এবং সেখানেও প্রচুর সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন।
অন্যদিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমারও নাগরিক তালিকা সংশোধনের বিরুদ্ধে। তবে বিহারের অন্য রাজনৈতিক দল গুলো এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। আর পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ধারা কার্যত দুটি ভাগেই এখন বিভক্ত।
রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস আসামের নাগরিক তালিকাকেই মানছে না। তারা পশ্চিমবঙ্গে সেটা করতেও দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। যদিও রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষসহ বিজেপি নেতৃত্ব বলছে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে শাসনভার নিলে আসামের মতো নাগরিক তালিকা সংশোধন যেমন করা হবে তেমনই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এককোটির বেশি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে বিতাড়ন করা হবে।
অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে এই সরগম রাজ্য রাজনীতির মধ্যেই মমতা ব্যানার্জি দাবি করেছেন, ভারত জুড়ে বিজেপি সুপার ইমার্জেন্সি চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবার আসামের তিনটি থানায় তিনটি মামলা হয়েছে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে। আসামের গৃহযুদ্ধের অবস্থা এবং সাম্প্রদীয়ক সম্প্রীতি নষ্ট করছে বিজেপি-মমতার এই মন্তব্য ঘিরেই বিপত্তি। বিজেপি নেতাদের করা ওই মামলায় গতকালই আসাম পুলিশ সিলমোহর দিয়েছে।
মমতার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে মামলা নিয়েও তীব্র ক্ষোভ জানান মমতা। তার বিরুদ্ধে একশ মামলা করলেও তিনি আসামের নাগরিক তালিকা থেকে ৪০ লাখ বাঙালিকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে শিলচর বিমান বন্দরে আটকে যাওয়া তৃণমূল প্রতিনিধি দলটি শুক্রবার সকালে কলকাতায় ফিরে যায়। সেখানে গিয়ে তারা সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, আসামের গণতান্ত্রিকভাবেই তারা একটি নাগরিক কনভেশনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু তাদের বিমান বন্দর থেকে বাইরে বের হতে দেওয়া হয়নি এবং তাদের মারধর করা হয়েছে। আসাম পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে ১৫১ ধারায় ওই প্রতিনিধি দলের আট সদস্যকে আটক করে। যদিও তারা প্রত্যেকেই ব্যাক্তিগত বন্ডে স্বাক্ষর করে জামিন পান।
দু'দিন আগে আসামের সংশোধিত নাগরিক তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানেই ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে ২ কোটি ৭৯ লাখ আবেদনকারীকে নাগরিক তালিকাভুক্ত করা হয়। বাদ যাওয়া ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭১৭ জন নতুন করে আবারও আবেদন করতে পারবেন। যদিও বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলোর দাবি, শুধুমাত্র বাঙালি হওয়ার কারণেই তাদের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা দেশভাগের সময় পূর্ববঙ্গ থেকে আশ্রয় নিয়েছিল বাদ যাওয়াদের মধ্যে তারাই রয়েছেন সিংহভাগ।
আসাম সরকার, বিজেপি যৌথভাবে দাবি করেছে, নাগরিক তালিকায় নাম তুলতে যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে হয় সেই কাগজপত্র না থাকায় বাদ পড়েছেন তারা। নতুন করে এরা সবাই আবার আবেদনও করতে পারবেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দু'দিন আগে এক নির্দেশনায় বলেছেন, বাদ পড়াদের বিরুদ্ধে এখনই কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
টিটিএন/পিআর