পাকিস্তানে নির্বাচনে কলকাঠি নাড়ছেন পীররা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০২ এএম, ২৩ জুলাই ২০১৮

পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন আগামী বুধবার। এই নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন দেশটির অসংখ্য সুফি নেতা বা পীররা। তারা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে তাদের সমর্থন ঘোষণা করে তাদের পক্ষে ভক্ত অনুসারীদের ভোট দেয়ার আদেশ দিচ্ছেন। অনেক পীর বা তাদের বংশধররা নিজেরাও সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে একটি কমিউনিটি সেন্টার, যেখানে সাধারণত বিয়েশাদীর অনুষ্ঠান হয়, সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে কয়েকশো পীর বা সুফি সাধকদের একটি সম্মেলন। সেইসঙ্গে এখানে সমবেত হয়েছেন কয়েকশো ভক্ত, যাদের মধ্যে রয়েছে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান।

সেখানে অংশ নেয়া প্রভাবশালী গোরা শরীফ দরবারের পীর ঘোষণা করেন যেন, তার অনুসারীরা সবাই ইমরান খানের দলকে সমর্থন করে। পীরের এই ঘোষণার পর তার এক মুরিদ বলেন, ‘আমরা যারা এখানে আছি, সবাই পীর সাহেবের গোলাম। তার আদেশ যাই হোক না কেন, আমরা আনন্দের সঙ্গে তা মেনে নেব। সেটি ঠিক না ভুল, তা নিয়ে আমরা বিতর্কে যাব না। তিনি যা বলবেন, আমরা তাই করব।’

এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাকিস্তানের পার্লামেন্টের মোট সদস্যের মধ্যে ১৬ শতাংশই পীর অথবা তাদের কোনো বংশধর। তবে অনেক পীর নিজেরা সরাসরি নির্বাচনে অংশ না নিয়েও অন্য প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ে সহায়তা করেন।

pakistan

ইমরান খানের দলের একজন প্রার্থীর ভাই, যাকে একজন পীর সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পীর আমাদের সমর্থন দিতে রাজি হয়েছেন। আজ সকালেই তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি এখন এখানে সেই ঘোষণা দেবেন।’

এই ধরনের আধ্যাত্মিকতার বিষয়টি এখনও পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ফলে পীরদের প্রভাবও ব্যাপক। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে টাকা আর জমি লেনদেনের বিষয়টিও। কোনো প্রার্থী বিজয়ী হতে পারে, সেটা দেখে প্রায়ই এই পীররা তাদের সমর্থন পরিবর্তন করেন।

কেন তারা এখন ইমরান খানকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, একজন পীরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ আমরা একদিনেই এই সিদ্ধান্ত নেইনি। গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক স্কলারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন তারা সবাই নিজেদের এলাকায় ফিরে যাবেন এবং তাদের ভক্ত অনুসারীদের ইমরান খানকে ভোট দেয়ার জন্য বলবেন।’

তিনি মনে করেন, রাজনীতি আর ধর্ম পরস্পর জড়িত বিষয়, অনেকটা রেললাইনের দুইটি লাইনের মতো।

pakistan

সমাবেশে ইমরান খান ঘোষণা দিচ্ছেন, তিনি পাকিস্তানকে একটি ইসলামিক কল্যাণ রাষ্ট্র বানাতে চান। এর আগের ক্ষমতাসীন দল পিএমএল (এন) পার্টিও অতীতে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সমর্থন পেয়েছিল। কিন্তু এখন খান সেই সমর্থন আদায় করে নিয়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ইমরান খানের দলের একজন নেতা শিবলি ফারাজ।

ফারাজ বলেন, ‘এটা একটি ধর্মপ্রাণ সমাজ, সুতরাং আমরা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রের মানুষের কাছে যাবার চেষ্টা করছি। পীররা আমাদের সমাজে এখনও অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি, তারা অনেক ভোট সংগ্রহ করতে পারেন। তাদের ভক্তদের ওপর তাদের অনেক প্রভাব রয়েছে। আর এটাই পাকিস্তানি রাজনীতির বাস্তবতা।’ তবে তিনিও মনে করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একদিন এসব আধ্যাত্মিকতা বাদ দিয়ে প্রার্থীদের যোগ্যতার বিষয়টি ভোটারদের কাছে প্রাধান্য পাবে।

শিক্ষা, সচেতনতা আর ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পীরদের প্রভাব এখন অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। তবে এখনও পীররা পাকিস্তানের আধ্যাত্মিকতা আর রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবেই রয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।