কারাগারে যেমন আছেন মরিয়ম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪৫ এএম, ২২ জুলাই ২০১৮

লন্ডনে কেনা চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধে দেয়া অর্থের উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়ে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করছেন পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। ৬ জুলাই রায় ঘোষণার পর ১৩ জুলাই লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আটক হয়ে আদিলা কারাগারেই রয়েছেন। সেখানকার নারী বন্দিদের জন্য সদ্যনির্মিত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি কক্ষে থাকছেন তিনি।

বই আর সহবন্দিদের আইনি পরামর্শ দিয়ে সময় কাটছে তার। একই মামলায় দশ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন মরিয়মের বাবা নওয়াজ শরিফ আর স্বামী সফদার আলীও ভোগ করছেন এক বছরের কারাদণ্ড। তাদেরও ঠাঁই হয়েছে আদিলা কারাগারে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শিহলা রেস্ট হাউসে যাবেন না নওয়াজ কন্যা মরিয়ম। বরং তিনি বাবা ও স্বামীর সঙ্গে আদিলা জেলেই থাকতে চান।

নতুন ক্যাটাগরিতে একজন সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে জন্য আবেদনের মধ্যে দিয়ে ‘বেটার ক্যাটাগরি’র বন্দির মর্যাদা পেয়েছেন নওয়াজ। আর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দেয়ার আওতায় একই ক্যাটাগরির বন্দীর মর্যাদা পেয়েছেন মরিয়ম। এই মর্যাদার বন্দী হিসেবে তার যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তাও প্রত্যাখ্যান করেছেন মরিয়ম। এর পরিবর্তে তিনি নারী কারাবন্দিদের জন্য সদ্য নির্মিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি কক্ষে রয়েছেন। বই পড়ে আর অন্য কারাবন্দি নারীদের আইনি সহায়তা বিষয়ে আলাপ করে সময় কাটছে তার। আর আইন অনুযায়ী অন্য কারাবন্দিদের শিক্ষা দিয়ে নিজের সশ্রম দণ্ড খাটছেন তিনি।

পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো বলছে, পাকিস্তানের পাঞ্জাবে আর কারাবন্দিদের জন্য ‘এ’, ‘বি’ আর ‘সি’ ক্যাটাগরি নেই। কয়েক বছর আগে লাহোর হাইকোর্টের নির্দেশনায় পাঞ্জাবের কারাবিধি পরিবর্তিত হয়। তখন থেকে বন্দিদের ‘অর্ডিনারি ক্যাটাগরি’ ও ‘বেটার ক্যাটাগরি’ নামের দুইটি ভাগে বিভক্ত করে সুবিধা দেয়া শুরু হয়।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসলামাবাদ থেকে নওয়াজ আর তার মেয়ে মরিয়মকে রাওয়ালপিন্ডির কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। সেখানে তাদের শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। একই সময়ে ‘শিহালা ট্রেনিং কলেজ রেস্ট হাউস’কে সাব-জেল ঘোষণা করে ইসলামাবাদের চিফ কমিশনার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। প্রথম প্রজ্ঞাপনের কয়েক ঘণ্টার মাথায় জারিকৃত আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শিহালা সাব-জেলে শুধু মরিয়মকে রাখার নির্দেশ জারি করা হয় এবং আগের প্রজ্ঞাপনটি অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। এর জন্য শিহলা রেস্ট হাউসকে সাব-জেলের মর্যাদা দিয়ে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো হয়। খরচ হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা।

সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, নিরাপত্তার কারণে বাবা ও মেয়েকে শিহলা রেস্ট হাউসে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছিল জেল কর্তৃপক্ষ। মরিয়ম কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন, যথেষ্ট নিরাপত্তা রয়েছে আদিলা জেলে। ফলে তাঁকে স্থানান্তরের কোনও প্রয়োজন নেই। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মারিয়মকে আদিয়ালা জেলেই রাখা হয়েছে। সেখানে তাকে ‘বেটার ক্যাটাগরি’ শ্রেণির সুবিধা দেয়া হয়েছে।

শনিবার আদিলা জেলে গিয়ে শরিফ ও মরিয়মের সঙ্গে দেখা করেন তাদের আইনজীবী আমজাদ পারভেজ। গত সোমবার পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন শরিফ। সেই সঙ্গে তাঁদের জামিনের আবেদনও করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে শরিফদের আবেদনের শুনানি হবে হাইকোর্টে। পারভেজ জানিয়েছেন, ওই আবেদন সংক্রান্ত আলোচনার জন্য তিনি শরিফ, মারিয়মের সঙ্গে দেখা করতে আদালতে গিয়েছিলেন। দেখা করেছেন শরিফের জামাই সফদারের সঙ্গেও।

মূলকথা, বাবা আর স্বামীর চেয়ে তুলনামুলক ভালো কক্ষে রয়েছেন মরিয়ম। তবে সবকিছুতেই সাধারণ কারাবন্দিদের মতোই থাকছেন তিনি।

সূত্র: ডন, জিও টিভি, জি নিউজ

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।