বাংলাদেশের বিকল বিমান সরিয়ে দিল ভারত
তিন বছর ধরে মধ্য ভারতের একটি বিমানবন্দরে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত একটি বাংলাদেশি বিমানকে কর্তৃপক্ষ পার্কিং লট থেকে এক কোণে সরিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার (২০ জুলাই) ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ এয়ারপোর্টের রানওয়ে থেকে বিমানটিকে সরিয়ে নেয়া হয়। বিমানটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছ থেকে বকেয়া ফি আদায়ের সম্ভাবনা না থাকায় এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
দিনটি ছিল ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট। সেদিন ঢাকা থেকে ওমানের ম্যাস্কটগামী ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিমান (ইউবিডি ৩২১) ভারতের ওপর দিয়ে ওড়ার সময় মাঝ-আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়লে রায়পুর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়। তখন জানা যায়, আকাশ থেকেই ওই বিমানের ইঞ্জিনের একটি যন্ত্রাংশ খুলে পড়ে বেমেতারা নামে একটি জায়গায় ফসলি খেতে। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পাইলট তখন নিকটবর্তী রায়পুর বিমানবন্দরে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি চান।
বিমানে তখন যাত্রী ও বিমানকর্মীসহ মোট ১৬৫ জন আরোহী ছিলেন। অনুমতি পেয়ে যাত্রীদের নিয়ে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করে। দুদিন পরে অন্য একটি বিমানে করে ওই বিমানের সব আরোহীকে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ ওই বিমানটি সেদিন থেকেই পড়ে ছিল রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ এয়ারপোর্টের রানওয়ের এক পাশে। মাঝে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কর্মকর্তারা নাকি কয়েকবার ঘুরেও গেছেন, কিন্তু বিমানটি ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বিমানটি সরিয়ে নেয়ার কারণ
রায়পুর বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট ম্যানেজার রাকেশ সহায় জানান, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের (বাংলাদেশ) ওই বিমানটির পার্কিং ফি বাবদ ৬০ লাখ রুপিরও বেশি বকেয়া আছে। কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ওই ফি মেটানো হয়নি। এমনকি বিমানটি ফিরিয়ে নেয়ারও ব্যাপারেও কোনো গরজ দেখায়নি তারা।
এছাড়া বর্তমানে রায়পুরের বিমানবন্দরে ব্যস্ততা বেড়েছে। বছর তিনেক আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি বিমান সেখানে ওঠানামা করে। কিন্তু একটি বিকল বিমান সেখানে একটি পার্কিং স্পেস দখল করে রাখায় অসুবিধা হচ্ছিল বলে জানাচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এর পরই তারা সিদ্ধান্ত নেন, পরিত্যক্ত ওই বিমানটিকে পার্কিং লট থেকে বিমানবন্দরের পশ্চিম প্রান্তে অব্যবহৃত একটি জায়গায় সরিয়ে দেয়া হবে।
যেভাবে সরিয়ে নেয়া হলো বিমানটি
শুক্রবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে বিমানটি সরানোর কাজ শুরু হয়। শেষ হয় আড়াইটায়। বিমানটি সরানোর সময় ইনায়েত হোসেন ও শুভঙ্কর ব্যানার্জি নামে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের দুজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। তাদের একজন সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ইঞ্জিনিয়ারিং) ও অন্যজন কলকাতায় সহকারী জেনারেল ম্যানেজার পদে কর্মরত।
ভারতের এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই) ওই বিকল বিমানটি সরানোর পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করে। রায়পুর এয়ারপোর্টের ম্যানেজার রাকেশ সহায়ের তত্ত্বাবধানে ভারতের এয়ার ইন্ডিয়ার প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদরা ওই বিমান সরিয়ে নেয়ার অপারেশন সম্পন্ন করেন।
বিমান কর্তৃপক্ষ যা বললেন
সংস্থাটির ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ারিং অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এম সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যেটা বলেছে, সেটাই ঘটনা। আমাদের সিভিল এভিয়েশনের কাছ থেকে অনুমতি পাচ্ছি না বলেই বিমানটি সারিয়ে, ইঞ্জিন বদল করার পরেও সেটিকে ঢাকায় আনতে পারছি না।
সিএএবি (সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ) বলছে, বিমানটিকে তৃতীয় কোনো দেশে নিয়ে যেতে হবে। এ রকম একটা নিয়ম আছে ঠিকই, কিন্তু যেহেতু এটা একটা দুর্ঘটনায় পড়া বিমান, তাই অনুমতি দিতেই পারত সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। ঢাকায় এনে বিমানটিকে সার্ভিসিং করা যেত। এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বিমানটিকে ফেরত আনার, জানান শাহাবুদ্দিন।
এর জন্য যে অর্থ দিতে হবে ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে, সেটা দিতে কোনো আপত্তি নেই বলেও তিনি জানান।
সূত্র: দ্য হিতভাদা, বিবিসি বাংলা
এসআর/এমএস