নেলসন ম্যান্ডেলার অজানা তথ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫০ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৮

জাতিবিদ্বেষবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার শততম জন্মবার্ষিকী আজ। বেঁচে থাকলে এই মহান নেতা আজ একশ বছরে পা রাখতেন। শততম জন্মবার্ষিকীতে নেলসন ম্যান্ডেলা সম্পর্কে জেনে নিন কিছু তথ্য। এর অনেক কিছুই হয়তো আগে জানতেন না।

নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তার গোত্রের দেয়া মাদিবা নামে পরিচিত। ম্যান্ডেলার ডাক নাম ছিল রোলিহলাহলা। এর অর্থ গাছের ডাল ভাঙে যে অর্থাৎ দুষ্ট ছেলে।

ম্যান্ডেলা তার পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে পড়ার সময়ে এক শিক্ষিক তার ইংরেজি নাম রাখেন নেলসন। দেশে ঔপনিবেশিক শাসন থাকার কারণে সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় সব শিশুরই একটি করে ইংরেজি নাম রাখা হতো।

প্রায় ২০ বছর ধরে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

ম্যান্ডেলার বাবার নাম এনকোসি এমফাকানাইসা গাদলা ম্যান্ডেলা। ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ম্যান্ডেলার বাবার। সে সময় ম্যান্ডেলার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর।

বাবাকে হারিয়ে থেম্বু রীতির প্রধান শাসক জংগিনতাবা দালিনদিয়েবোওর অধীনেই বড় হতে থাকেন নেলসন ম্যান্ডেলা। থেম্বুর বাসিন্দারা দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে বসবাস করে।

নিজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আটক হওয়া থেকে বাঁচতে প্রায় সময়ই ম্যান্ডেলা ছদ্মবেশ ধারণ করতেন। তিনি মাঝে মাঝেই মাঠকর্মী বা অন্য কোন পোশাক পরে বিভিন্ন পেশাজীবী হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকতেন।

১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেফতার করে এবং তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন। এর অধিকাংশ সময়ই তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রবেন দ্বীপে।

১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন। এরপর তিনি তার দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন।

১৯৬৩ সালে তার বিরুদ্ধেও অন্তর্ঘাতের অভিযোগও আনা হয়। সে সময় ডক থেকে তিনি তার জনপ্রিয় ভাষণটি দেন। তিনি জাতির উদ্দেশে বলেন, আমি এমন একটি গণতান্ত্রিক এবং মুক্ত সমাজের স্বপ্ন লালন করি যেখানে সবাই একত্রে শান্তিতে বসবাস করতে এবং সমান অধিকার ভোগ করতে পারবে। এটা হবে একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা। প্রকৃতপক্ষে আমি এমন কোথাও বসবাস করতে চাই এবং এটাই অর্জন করতে হবে। যদি প্রয়োজন হয়, এর জন্য আমি মৃত্যুকে বরণ করতেও প্রস্তুত আছি।

কারাগারে থাকাকালীন ম্যান্ডেলাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তাকে একটি ছোট সেলে রাখা হয় যেখানে কোন বিছানাও ছিল না। চুনাপাথর খনন কেন্দ্রে তাকে সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়।

খনিতে কাজ করতে করতে ম্যান্ডেলার চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ম্যান্ডেলার চোখের অশ্রুগ্রন্থি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে, পরবর্তী জীবনে তার চোখে আর অশ্রুও তৈরি হয়নি।

কারারুদ্ধ অবস্থায় ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা থেকে আইনে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন ম্যান্ডেলা।

কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ডেসমন্ড টুটু এবং অলিভার ট্যাম্বুর মতো নেতা অন্যান্য জাতিবিদ্বেষবিরোধী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ম্যান্ডেলা। কারাগারে বসেই নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ লং ওয়াক টু ফ্রিডমের খসড়া শেষ করেন তিনি।

ম্যান্ডেলার ছয় সন্তান-মাদিবা, মাকাজিউয়ে, সাংকাথো, পামলা, জেনানি এবং জিন্দজি। এদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। তার ছয় সন্তানের ঘরে ১৭ নাতি-নাতনি রয়েছে। ম্যান্ডেলার তিন বোন, তিনজন সৎভাই এবং ছয়জন সৎবোন রয়েছে।

ম্যান্ডেলা খেলাধুলা পছন্দ করতেন। যুব্ক বয়সে বক্সিং এবং দীর্ঘ দূরত্বে দৌড় প্রতিযোগিতায় তার বেশ আগ্রহ ছিল। ম্যান্ডেলা বক্সিং পছন্দ করতেন কারণ এই খেলায় প্রত্যেকের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকে। লং ওয়াক টু ফ্রিডমে তিনি লিখেছেন, বক্সিং সমমাত্রার খেলা যেখানে রিং, র‌্যাংক, বয়স, রং এবং সম্পদ অপ্রাসঙ্গিক বিষয়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২৭ বছরের কারাজীবনে প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করতেন ম্যান্ডেলা। একদিনও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন ম্যান্ডেলা।

ওইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজ জীবন শুরু করলেও একটি ছাত্র বিক্ষোভ অংশ নেয়ায় তাকে সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর ম্যান্ডেলা ১৯৪১ সালে জোহেন্সবার্গে চলে যান। কারণ সে সময় তিনি থেম্বুর লোকজনের সঙ্গে থাকলে রীতি অনুযায়ী তাকে তখনই বিয়ে করতে হতো। কিন্তু ওই সময়ই তিনি বিয়ে করতে চাননি।

জোহেন্সবার্গে যাওয়ার পর ম্যান্ডেলা একটি খনি কোম্পানিতে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে জীবনের প্রথম চাকরি শুরু করেন। সেখানেই তিনি ইউনিভার্সিটি অব আফ্রিকার অধীনে তার ব্যাচলর ডিগ্রি শেষ করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি সম্পর্কে তার আগ্রহ বাড়তে থাকায় তিনি আইনি প্রতিষ্ঠান ওইটকিনে একজন মুহুরি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ওইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনিই ছিলেন তার ল’ক্লাসের একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র।

ল’স্কুলে ম্যান্ডেলার রাজনীতির প্রতি ঝোঁক আরও বাড়তে শুরু করে। সে সময় বাসের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিপক্ষ হয় এবং বাসে চলাচল প্রত্যাহার করা হয়। ম্যান্ডেলা এতে যোগ দিয়েছিলেন এবং ওই প্রতিবাদ সফলও হয়।

নেলসন ম্যান্ডেলার তিনজন স্ত্রী। এরা হলেন, এভিলিন মেস, উইনি মাদিকিজেলা এবং গ্রেসা ম্যাশেল। এভিলিন মেস ছিলেন একজন সেবিকা। ১৯৪৪ সালে তাকে বিয়ে করেন ম্যান্ডেলা। তাদের দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে আছে। ১৯৫৮ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

উইনি মাদিকিজেলার সঙ্গে ম্যানডেলার বিয়ে হয় ১৯৫৮ সালে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তারা একত্রে সংসার করেছেন।

নেলসন ম্যান্ডেলার ৮০তম জন্মদিনে ১৯৯৮ সালের ১৮ জুলাই গ্রেসা ম্যাশেলকে বিয়ে করেন তিনি। ম্যান্ডেলা ছিলেন গ্রেসা ম্যাশেলের দ্বিতীয় স্বামী।

১৯১৮ সালে আজকের এই দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার ছোট্ট শহর এমভেজোতে জন্ম গ্রহণ করেন জাতিবিদ্বেষবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার হাউটন রাজ্যের জোহান্সবার্গে ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান নেলসন ম্যান্ডেলা।

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর সংগ্রাম তাকে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিশেষ দূত হিসেবে পরিচিতি এনে দেয় এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

টিটিএন/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।