গড়াই নদীর ভাঙনে বদলে যাচ্ছে মানচিত্র
ঝিনাইদহের শৈলকূপায় গড়াই নদীর ভাঙনকে পুঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহলের প্রতিহিংসা আর রাজনৈতিক যাতাকলে বদলে যাচ্ছে ৩টি ইউনিয়নের মানচিত্র। উপজেলার সারুটিয়া, হাকিমপুর ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। উদাসীন কর্তৃপক্ষের সামনেই নিত্য বাড়ছে ভাঙন আর দখলের দৌরাত্ম্য।
সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়ুরিয়া থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল ধরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা ও খুলুমবাড়িয়া, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া, উলুবাড়িয়া, নতুনভুক্ত মালিথিয়া, চরপাড়া ও লাঙ্গলবাঁধ বাজার এখন নদী ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে। হারিয়ে গেছে এসব এলাকার অনেক ফসলি জমি, বাড়িঘর, কলাক্ষেতসহ বিভিন্ন বাড়ন্ত ফসল।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার জাগো নিউজকে বলেন, দ্রুত গড়াই
নদীতে টি-চ্যানেল তৈরি, স্পার্কিং ও গভীর ড্রেজার প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙন ভরাটসহ পানির গতিপথ ঘুরানোর বিকল্প নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা আর সহযোগিতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৯০ দশকের পর থেকেই বছরের পর বছর গড়াই নদী ভাঙনের করাল গ্রাসে বদলে গেছে বড়ুরিয়া, বাখরবা, কৃষ্ণনগর, কৃর্ত্তিনগর, গোসাইডাঙ্গা, সারুটিয়া, শাহবাড়িয়া, গাংকুলা অংশ এবং হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা ও খুলুমবাড়িয়া, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর,মাজদিয়া, উলুবাড়িয়া, নতুনভুক্ত মালিথিয়া, চরপাড়া ও লাঙ্গলবাঁধ বাজারসহ ৩ ইউনিয়নের বৃহৎ এলাকা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়ুরিয়া-কৃষ্ণনগর, কাশিনাথপুর, লাঙ্গলবাঁধ ও মাদলা। ভিটেবাড়ি, জমিজমা সহায়-সম্বল হারিয়ে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাউবোর প্রধান সেচ খালের ধারে। ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে বড়ুরিয়া-কৃষ্ণনগর এলাকার কিছু মানুষ ওপারে জেগে ওঠা প্রায় দেড় হাজার বিঘা আয়তনের চরে জীবন-যাপনের জন্য ভূমিহীন হিসেবে আশ্রয় খোঁজেন। তবুও ঠাঁই হয়নি তৎকালীন গণবাহিনী নেতা একদিল গ্রুপের অত্যাচারে।
গড়াই নদীর দুই পাড়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতিহিংসার শিকারে অমীমাংসিত থেকে গেছে নানা উদ্যোগ। নদীর এপার-ওপার মানুষের মাঝে চর দখল নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এমনকি মারামারির ঘটনাও কম ঘটেনি। অপরদিকে বেড়েই চলেছে নদী ভাঙন।
এ বছর বর্ষার পানি বাড়তেই আবার শুরু হয়েছে ভাঙনের ভয়াল রূপ। গৃহহীন ভুক্তভোগিরা গভীর করে ড্রেজিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ভাঙন বন্ধ, স্পার্কিং ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক টি-চ্যানেল নির্মাণ করে শৈলকূপার মানচিত্র ঠিক রাখা, একই সঙ্গে বড়ুরিয়া-কৃষ্ণনগর, কাশিনাথপুর, লাঙ্গলবাঁধ ও মাদলাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের আবাদি জমিজমা বাঁচানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। দিনে দিনে হারিয়ে গেছে বড়ুরিয়া থেকে শুরু হয়ে লাঙ্গলবাঁধ বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২০ ঘরবাড়ি বিলীন কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যা পুননির্মাণ জরুরি।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার জাগো নিউজকে জানান, স্থায়ী ভিত্তিতে স্পার্কিং ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক টি-চ্যানেল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুননির্মাণসহ ভাঙনরোধ করে বাড়িঘর, কৃষি জমি রায় শৈলকুপার ৩টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে জরুরি প্রকল্প দিয়ে বরাদ্দের চেষ্টা করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমজেড/পিআর