বিপন্ন প্রজাতির ৮ কালো গণ্ডারের মৃত্যু কেনিয়ায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৮

কেনিয়ার জাতীয় পার্কে স্থানান্তর করা বিপন্ন প্রজাতির ৮টি কালো গণ্ডার মারা গেছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই প্রাণীগুলোকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। বিপন্ন প্রজাতির এই গণ্ডারের বিলুপ্তি ঠেকাতে নাইরোবি ও নাকুরু থেকে দেশটির জাতীয় পার্কে আনা হয়। মোট ১১টি গণ্ডারকে জাতীয় পার্কে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

কেনিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক মুলি মুইয়া বলেন, বিপন্ন এ প্রাণীটির মৃত্যুহার অকল্পনীয়। মৃত্যুর কারণ জানতে প্রাণীগুলোর ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

নতুন পরিবেশে সল্ট পয়জনিংয়ের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান মুইয়া।

কেনিয়ার বন্যপ্রাণী বিষয়ে কাজ করা ওয়াইল্ডলাইফডিরেক্ট এক বিবৃতিতে এক সঙ্গে এতগুলো গণ্ডারের মৃত্যুর ঘটনাকে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক ধরনের বড় ট্রাজেডি বলে আখ্যায়িত করেছে। পাশাপাশি সংস্থাটি এসব প্রাণী স্থানান্তরের সময় স্বচ্ছ ও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ওয়াইল্ডলাইফডিরেক্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাওলা কাহুমবু সিএনএনকে জানান, এটা একটা দুর্যোগ। সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এসব প্রাণী স্থানান্তরের সময় এভাবে এত মৃত্যুর ঘটনা আগে ঘটেনি। এ অপারেশনে ৮০ শতাংশ গণ্ডারেরই মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে আমরা এক শতাংশ বিপন্ন প্রজাতির এই প্রাণীটিকে হারিয়েছি। আমরা আগে এভাবে যত প্রাণী রক্ষা করেছি, এবার সংরক্ষণ করতে গিয়ে মারা গেল তার দশগুণ।

কাহুমবুর মতে, গণ্ডার স্থানান্তর করা অত্যন্ত জটিল একটি কাজ। অনেকটা স্বর্ণমুদ্রা স্থানান্তরের মতো। এর জন্য দরকার হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন, চিন্তা-ভাবনা ও নিরাপত্তার। কারণ, পৃথিবীতে এ প্রাণীর সংখ্যা বিরল।

কাহুমবু বলেন, ‘আমরা বাকি তিনটা নিয়ে এখন শঙ্কিত। তাদের আমরা বাঁচাতে পারব কি না, এ নিয়ে আমরা সন্দীহান। তারা এখন খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ, তারা এখন যে পরিবেশে আছে, সেই পরিবেশে থেকে আটটিই মারা গেছে।’

ধারণা করা হচ্ছে, স্বাদু পানি থেকে নিয়ে আসা নতুন পরিবেশে লবণাক্ত পানিতে খাপ খাওয়াতে না পারায় প্রাণীগুলোর মৃত্যু হয়েছে। মুইয়া আরও জানান, এ ঘটনার সাথে কোনো কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া মাত্রই এটা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

একসঙ্গে এতগুলো বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী মারা যাওয়ার ফলে দেশটিতে ট্রান্সলোকেশন পদ্ধতি স্থগিত রাখা হয়েছে। দেশটির বন্যপ্রাণী বিষয়ক মন্ত্রীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএন জানায়, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কেনিয়া মোট ১৪৯টি এই প্রজাতির গণ্ডার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করেছে। এর মধ্যে মারা গেছে আটটি।

পশু সংরক্ষণবাদীরা বলছেন, পৃথিবীতে ৫ হাজারের মতে কৃষ্ণ গণ্ডার রয়েছে। এর মধ্যে কেনিয়ায় রয়েছে ৫৪০টি। চোরা শিকারীদের কারণে প্রাণীটির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবে এশিয়াতে কৃষ্ণ গণ্ডারের শিংয়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। এসব কারণে সাত বছর আগে পশ্চিমা কৃষ্ণ গণ্ডারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

বিপন্ন কৃষ্ণ গণ্ডার রক্ষায় কাজ করা সংরক্ষণবাদী গ্রুপ সেভ দ্য রাইনো বলছে, সারা পৃথিবীতে পাঁচ প্রজাতির গণ্ডার হুমকির মুখে রয়েছে।

সূত্র: সিএনএন

এসআর/টিটিএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।