থাই কিশোরদের উদ্ধারের পর কিছু প্রশ্ন এবং তার জবাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৮ পিএম, ১৩ জুলাই ২০১৮

জটিল অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৭দিন পর গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া থাই কিশোর ফুটবলাররা এবং তাদের কোচ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। থাইল্যান্ডের এবং বিদেশি ডুবুরিরা মিলে যে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে এই অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেছে, তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

তবে ঘটনা নিয়ে মৌলিক প্রশ্নগুলোর জবাব কি মিলেছে? বলা হচ্ছে জবাব মিলতে শুরু করেছে। কিশোর ফুটবলাররা কেন গুহার গভীরে গিয়েছিলো? এই প্রশ্নে অনেক বক্তব্য এসেছে।

কিন্তু যারা গুহায় আটকা পড়েছিল, সেই কিশোর ফুটবলার এবং তাদের সাথে থাকা সহকারি কোচের কাছ থেকে সরাসরি এখনও কিছু জানা সম্ভব হয়নি।

তাদের প্রধান কোচ নোপারাত কানতাওং বলেছেন, শনিবার তাদের একটি ফুটবল ম্যাচ ছিল। সেটি বাতিল করে তিনি সেদিন প্রশিক্ষণের জন্য সময় নির্ধারণ করেছিলেন।

তিনি তাদের গুহায় যাওয়ার জন্য কোনো পরামর্শ দেননি। ফলে তাদের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল না। তবে শনিবার কিশোর ফুটবলারদের একজনের জন্মদিন ছিল।

জন্মদিন পালনের জন্য সেদিন স্থানীয় একটি দোকান থেকে এই কিশোররা সাত শ’ থাই বাথ দিয়ে খাবার কিনেছিল বলে ওই দোকানদার জানিয়েছেন। প্রধান কোচ নোপারাত কানতাওং বলেছেন, সহকারি কোচ একাপ্পল এই কিশোর ফুটবলারদের খুব ভালবাসে এবং তাদের জন্য সে সবকিছু করতে পারে।

তিনি ধারণা করছেন, কিশোর ফুটবলাররা সহকারি কোচের কাছে আবদার করে তাকে নিয়ে গুহায় গিয়েছিল। এই এলাকায় গুহাটি সকলের কাছে পরিচিত এবং এই কিশোররাও আগে ওই গুহায় গিয়েছিল।

তারা যে গুহার গভীরে চলে যায়, সে ব্যাপারে ধারণা করা হচ্ছে, তারা যখন গুহায় গেছে, তখন শুকনো ছিল। কিন্তু হঠাৎ অতিবর্ষণে গুহায় পানি বাড়তে থাকায় তারা গভীরে যেতে বাধ্য হয়েছে।

উদ্ধার হওয়ার পর এই কিশোরদের সাথে তাদের বাবা মাকে কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নে থাই কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা হচ্ছে, এই কিশোররা এখনও অনেক দূর্বল। আর এমন দূর্বল শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সেকারণে তারা এমুহূর্তে সেই ঝুঁকি নিতে চাইছে না।

কিশোর ফুটবলারদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে। থাইল্যান্ডে তাদের জীবন এখন অনেক মূল্যবান। তাদের কোনো ক্ষতি হোক, সেই সুযোগ দিতে রাজি নয় থাই কর্তৃপক্ষ। সেজন্য পিতা মাতাদের কাঁচের দেয়ালের বাইরে থেকে দেখানো হয়েছে। এই কিশোরদের বেশিরভাগের পিতা মাতা প্রান্তিক এলাকার এবং দরিদ্র। তাদের সন্তানদের যেভাবে উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে তারা বার বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।

ফলে আপাতত সন্তানের কাছে যেতে না দেয়ার জন্য পিতা মাতারা প্রতিবাদ করবেন না। সহকারি কোচ একাপ্পল এর বিরুদ্ধে কী শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে?

যেহেতু এই কোচ কিশোরদের সাথে গুহায় গিয়েছিলেন, সেখানে ঘটনার দায় তার উপরই আসতে পারে। কিন্তু কিশোরদের মাতা পিতারা বলেছেন, তারা তাকে মাফ করে দিয়েছেন। কারণ গুহায় আটকা থাকাবস্থায় এই সহকারি কোচই কিশোরদের উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন।

এছাড়া সহকারি কোচ অতীতে ১২ বছর ভিক্ষু হিসেবে ছিলেন। ফলে তিনি মেডিটেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে কিশোরদের ধকল সামাল দেয়ার মতো পরিস্থিতিতে রাখতে পেরেছিলেন। গুহায় আটকা পড়ার পর তাদের কাছে যেটুকু খাবার ছিল, তা তিনি নিজে না খেয়ে থাকার চেষ্টা করেছেন। তিনি খেলে কিশোরদের খাবার কমে যেতে পারে, এই চিন্তা তার মধ্য ছিল।

এমন অনেক কথা সামাজিক নেটওয়ার্কে ছড়িয়েছে। তার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে থাই জনগণের মাঝে। এছাড়া থাই জনগণের মাঝে দোষারোপের সংস্কৃতি নেই।

তারা কী গুহার ভেতরে পুরোটা সময় অন্ধকারে ছিল? তাদের সাথে ছিল কমদামি টর্চ লাইট। যেটি অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তাদের খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ, নয়দিন তারা অন্ধকারে ছিল।

এরপর থাই সেনাবাহিনীর একজন চিকিৎসক এবং তিনজন ডুবুরি যখন তাদের খুঁজে পেলো, তখন তাদের কাছে আলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়। অনেকদিন অন্ধকার গুহায় থাকার পর আলো জ্বালানোর কারণে চোখ বাঁচাতে তাদের তখন সানগ্লাস পড়তে হয়।

কিশোরদের উদ্ধারে এতবড় অভিযানে অর্থ কে দিয়েছে? অভিযানের পেছনে খরচের বড় অংশ দিয়েছে থাই সরকার। অনেক দেশ এতে জড়িত ছিল, সেই দেশগুলোও তাদের নিজেদের সহযোগিতা দলের খরচ বহন করেছে।

যেমন মার্কিন বিমান বাহিনীর ৩০ জন সদস্য এসেছিল সাহায্যের জন্য। সেই অর্থ মার্কিন সরকার দিয়েছে। থাই ব্যবসায়ীরা অনেকে পরিবহন এবং খাবার দিয়ে সাহায্য করেছে।

আন্তর্জাতিক ডুবুরিদের আনার জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্স বিনামূল্যে টিকেট দিয়েছে। এছাড়া অনেক সাধারণ মানুষও নানাভাবে সাহায্য করেছে।

বিবিসি বাংলা।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।