হাসপাতালে কেমন আছে উদ্ধার হওয়া থাই ফুটবলাররা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৪ এএম, ১২ জুলাই ২০১৮

গুহা থেকে শ্বাসরুদ্ধকর উদ্ধার অভিযানের পর থাই কিশোর ফুটবলারদের প্রথমবারের মতো দেখা মিললো হাসপাতালের বিছানায়। হাসপাতাল থেকে এই প্রথম ১২ কিশোরের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, গুহা থেকে উদ্ধার পাওয়া কিশোর ফুটবলাররা হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কক্ষে পাশাপাশি বিছানায় বসে বা শুয়ে আছে। তাদের পরনে হাসপাতালের গাউন এবং মুখে মাস্ক। কিশোর ফুটবলারদের একজন ক্যামেরা দেখে বিজয়সূচক ভি চিহ্ন দেখিয়েছে। তবে গুহার ভেতরে দীর্ঘদিন থাকা এবং বিপদজনক উদ্ধার অভিযানের ধকল সামলাতে তাদের কিছুটা সময় প্রয়োজন।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। এদিকে, এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভয়াবহ উদ্ধার অভিযানের সময় কিশোর ফুটবলার ১২জন এবং তাদের কোচকে এক ধরণের ঔষধ দেয়া হয়েছিল, যাতে তারা আতঙ্কিত না হয়।

উদ্ধার কাজে সরাসরি অংশ নেয়া একজন ডুবুরি জানিয়েছেন, অন্ধকার ও সংকীর্ণ জায়গা এবং পানির ভেতর ডুব দিয়ে বের করার সময় কিশোররা যাতে আতঙ্কিত না হয়, সেজন্য কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ দিয়ে তাদের গুহা থেকে বের করে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল।

থাই নেভি সিল থেকেও গুহার ভেতরে কিশোর ফুটবলারদের উদ্ধার অভিযানের কিছু ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। থাই নেভি সিল এর সাবেক কর্মকর্তা চিয়েনান্ত পীরানারং সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘুমিয়ে ছিলো। কেউ কেউ তাদের আঙ্গুলের ঝাঁকুনি দিয়েছিলো। কিন্তু তারা শ্বাস নিচ্ছিল। আমার কাজ ছিলো, তাদের বের করে আনা।

এই কিশোরদের প্রত্যেকের জন্য দু’জন করে ডুবুরি ছিল। তাদের শুকনো অংশ দিয়ে পার করার জন্য স্ট্রেচার ব্যবহার করা হয়।

থাই নেভি সিল এর প্রধান বলেন, ১২জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচকে গুহা থেকে উদ্ধারের মাধ্যমে আশা বাস্তবে রুপ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ক্ষীণ আশা ছিল যে, তারা বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু তাদের উদ্ধার করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়েছিলাম। আমাদের কেবলমাত্র ক্ষীণ আশা ছিল, তার উপর ভিত্তি করে আমরা কাজ করেছি।

এই কিশোর ফুটবলাররা গুহায় পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে আটকা পড়েছিল। তাদের উদ্ধারে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান বিশ্বকে নাড়া দেয়। তিনদিনের জটিল অভিযানের প্রথমদিনে রোববার উদ্ধার করা সম্ভব হয় চারজনকে। পরদিন সোমবার উদ্ধার হয় চারজন। সবশেষে মঙ্গলবার বাকি চারজন কিশোর এবং তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়।

কিশোরদের প্রত্যেকের প্রায় দুই কেজি করে ওজন কমেছে। কিন্তু তাদের শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল বলে জানানো হয়েছে। উদ্ধারের সাথে সাথেই তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। উদ্ধারের পর ডুবুরিসহ অভিযানে জড়িতরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

সামাজিক মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ উদ্ধারকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্লাব উদ্ধার হওয়া কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচকে ক্যাম্পে ম্যাচ দেখার প্রস্তাব দিয়েছে এবং একটি টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

উদ্ধার হওয়া ফুটবলারদের বয়স ১১ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে হবে। তারা ওয়াইল্ড বোয়ার নামের একটি ফুটবল দলের সদস্য। গত ২৩ শে জুন তারা থাইল্যান্ডে উত্তরাঞ্চরীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল। অতিবর্ষণে গুহায় পানি বেড়ে যাওয়ায় তারা গুহার ভেতরে আটকা পড়েছিল।

ব্রিটিশ একজন ডুবুরি তাদের খুঁজে পায় গুহায় অন্ধকার অংশে। কিন্তু কিশোরদের অনেকে সাঁতার জানতো না। ফলে তাদের উদ্ধার করে আনার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। গুহাটির অনেক জায়গা ছিল খুবই সংকীর্ণ। আর অতিবর্ষণে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল। তারা গুহার যেখানে আটকা পড়েছিল, সেই জায়গাটিও ছিল খুবই জটিল।
অভিজ্ঞ ডুবুরিদের জন্যও সেখানে যাওয়া বেশ জটিল ছিল।

এই ফুটবল দলের অধিনায়ক দুগানপেত প্রোমতেপ। তার বয়স ১৩ বছর। সে দলকে উজ্জীবিত রাখতে কাজ করে। সে এর আগে থাইল্যান্ডের বেশ কয়েকটি পেশাদার ক্লাব থেকে স্কাউটের প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

দলটির এক সদস্য মিয়ানমার বংশোদ্ভুত আদুল স্যাম অন। তার বয়স ১৪ বছর। সে বিভিন্ন ভাষা জানে। সেই দলটির একমাত্র সদস্য, যে তাদের সন্ধান পাওয়া ব্রিটিশ ডুবুরির সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছে।

পিরাপাত সোমাপিয়াংজাই নামের এক কিশোরের জন্মদিন ছিল ২৩ জুন। সেদিনই তার ১৭ বছর পূর্ণ হয়। তার জন্মদিন পালনের জন্য গুহায় গিয়ে তারা আটকা পড়েছিল। এক্কাপোল জানথাওং ফুটবল দলটির কোচ। তার বয়স ২৫ বছর। তিনিই সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় ছিলেন। কারণ উদ্ধারকারীদের কাছে তিনি বার বার খাবার খেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার খাবার কিশোরদের দিতে বলেছেন।

টিটিএন/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।