তুরস্কে আরও ১৮ হাজার কর্মকর্তা বরখাস্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৮

তুরস্কে আরও ১৮ হাজার ৫শ সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুতদের তালিকায় রয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা, সেনা বাহিনীর সদস্য ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তারাও। রোববার এক জরুরি ডিক্রি জারি করে এই ঘোষণা দেয়া হয়। দেশটিতে দু’বছর ধরে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।

রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান নির্বাহী প্রসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার আগে জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হবে। তার আগেই ডিক্রি জারির মাধ্যমে আবারও কয়েক হাজার কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো।

তুরস্কের প্রথম নির্বাহী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে সোমবার শপথ নেবেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। গত মাসে নির্বাচনে জয় লাভের পর দেশের সর্বময় ক্ষমতাধর হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।

দেশটির অফিসিয়াল গেজেটে বলা হয়, সর্বমোট ১৮ হাজার ৬৩২ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে যার মধ্যে ৮ হাজার ৯৯৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দেশটির নিরাপত্তার স্বার্থ পরিপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে আঁতাতের যোগসূত্র থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া বরখাস্ত হওয়া অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন ৩ হাজার ৭৭ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ১ হাজার ৯৪৯ জন বিমানবাহিনীর সদস্য, ১ হাজার ১২৬ জন নৌবাহিনীর সদস্য। বেসামরিক লোকদের মধ্যে রয়েছেন ১ হাজার ৫২ জন। এছাড়া ৬৪৯ জন বিশেষ বাহিনীর এবং ১৯২ জন কোস্ট গার্ডের সদস্য।

৪৬১ পৃষ্ঠার ওই গেজেট আরও বলা হয়েছে, এই ডিক্রির অধীনে ১৪৮ জনকে যাদের পূর্বে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল তাদের আগের পদে বহাল করা হবে। এছাড়া এই ডিক্রির আদেশে ১২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তিনটি সংবাদপত্র ও একটি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুতের পাশাপাশি তাদের পাসপোর্টও বাতিল করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

দেশটিতে দুই বছর ধরে চলমান জরুরি অবস্থা আগামী ১৮ জুলাই তুলে নেয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে দেশটিতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। জরুরি অবস্থা এখনও চলমান থাকায় সংসদকে এড়িয়ে নতুন এই ডিক্রি জারি করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ১৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়। তবে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। ওই ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে কমপক্ষে ২৬০ জন নিহত এবং আরও ২ হাজার ২শ মানুষ আহত হয়।

ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তুর্কি সরকার। অভ্যুত্থানের পরপরই দেড় লাখের বেশি সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং আরও প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে আটক করা হয়।

ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইজমিরের একটি আদালতে বিচারের মুখোমুখি হন ২৮০ সাবেক সেনা সদস্য। ১০৪ সাবেক সেনা সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও ৫২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।

অভ্যুত্থান পরবর্তী তুরস্ক প্রেসিডেন্টের কঠোর পদক্ষেপকে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করছে পশ্চিমা বিশ্ব। যদিও আঙ্কারা বলে আসছে, তুরস্ককে রক্ষা করতে এ ধরনের ধরপাকড় দরকার ছিল। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এ ঘটনাকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ফেতুল্লা গুলেনের অনুসারীদের সৃষ্ট ভাইরাস বলে আখ্যায়িত করেছেন।

তুরস্ক সরকার বরাবরই এ অভ্যুত্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা ফেতুল্লা গুলেনকে দায়ী করে আসছে। তবে গুলেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সূত্র: দ্য হুররিয়াত, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

এসআর/টিটিএন/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।