যেভাবে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নেয় দিল্লির সেই ১১ জন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, ০৫ জুলাই ২০১৮

দিল্লির একটি বাড়ি থেকে গত রোববার (১ জুলাই) সকালে একই পরিবারের ১১ জনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ। তাদের মধ্যে ৭ জন নারী এবং বাকি চারজন পুরুষ। বাড়িটি থেকে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়ির বাইরে বসানো সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ ও ডায়েরিতে লেখা থেকে তারা গণ-আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত শনিবার যখন পুরো ভারতে নিজেদের নৈশভোজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল, ঠিক সে সময়ে উত্তর দিল্লির বুরারির চুন্দাওয়াত পরিবার তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিল দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা করা গণ-আত্মহত্যার! দড়ি, টুল, নিজেদের শেষ খাবারের অর্ডার দেয়ায় ব্যস্ত ছিল পরিবারের সদস্যরা। ওই বাড়ির বাইরে বসানো সিসিটিভি ফুটেজ এবং ১১ বছর ধরে লেখা ১১টা ডায়েরি থেকেই জানা যায়, এই হত্যা বা আত্মাহত্যার সঙ্গে বাইরের কারও কোনো হাত নেই।

পরিবারের একজন সদস্যও ভাবতে পারেননি যে, এ ‘ক্রিয়াকর্মের’ ফলে তাদের মৃত্যু হবে বা হতে পারে। তারা হয়তো ভেবেছিলেন এর ফলে আরও বেশি ‘শক্তি’ নিয়ে ফিরে আসবেন। চুন্দাওয়াত পরিবারের বাইরের গেটের সামনে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এ বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত তদন্ত কর্মকর্তারা।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পরিবারের একজন মহিলা, তার কন্যা এবং ওই পরিবারের দুই কিশোর ‘গণ-আত্মহত্যা’র জন্য ব্যবহার করা টুল আর দড়ি নিয়ে বাড়ি ভেতরে আসছেন। পরিবারের সকল সদস্যের রাত একটার কাছাকাছি সময়ে মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আরও জানা যায়, ওই পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত নিমগ্নভাবে ৪৫ বছরের ললিত চান্দওয়াতের নির্দেশ অনুসরণ করে চলেছেন। ৭৭ বছরের নারায়ণী দেবীর ছোটো ছেলে তিনি। ডায়েরির সমস্ত নোটগুলোই ললিতের লেখা। ললিত তার মৃত বাবার থেকে নির্দেশ পেয়েই ডায়েরিতে লিখে রাখতেন এবং সেই নির্দেশ মেনেই কাজ করতেন। ললিত ছাড়াও ওই ডায়েরিটিতে আরও একজনের লেখা পাওয়া গেছে, তিনি হলেন- ললিতের ত্রিশের আশেপাশের বয়সী ভাগ্নি প্রিয়াঙ্কা চুন্দাওয়াত। গত ১৭ জুন যার বাগদান হয়েছিল।

ডায়েরির নোট থেকে আরও জানা যায়, ওই পরিবারের সদস্যরা মন থেকে বিশ্বাস করতেন যে, ললিতের বাবা এবং নারায়ণী দেবীর স্বামীর ‘আত্মা’ই তাদেরকে বাঁচিয়ে দেবেন। একদম শেষ ডায়েরিতে লেখা শেষ বাক্যটি ছিল- ‘...একটা কাপে জল রেখে দেবে। ওই জলের রঙ যখন বদলাতে থাকবে, তখনই জানবে যে আমি উপস্থিত হবো এবং তোমাদের সবাইকে বাঁচাব’। ওই ‘ক্রিয়াকর্ম’ হয়ে যাওয়ার পর প্রত্যেকের বাঁধন খুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু...

সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে যা দেখা যায়- রাত ১০টা- বাড়ির এক বয়স্ক গিন্নি কিছু তুলে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। রাত ১০টা ১৫ মিনিটি- দুই ছেলে ধ্রব ও সোহম তার নিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন। রাত ১০টা ৩৯ মিনিট- দোকানে অর্ডার দেয়া ২০টি রুটি বাসায় পৌঁছলো। রাত ১০টা ৫৭ মিনিট- কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হন বাড়ির বড় ছেলে ভুবনেশ এবং রাত ১১টা ৪ মিনিটে তিনি আবার বাড়িতে ফেরত আসেন। সবশেষ ভোর ৫টা ৫৬ মিনিটে বাড়ির সামনে দিয়ে একটি দুধের গাড়ি চলে যায়।

সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ এবং ডায়েরির নোট হাতে আসায় পুলিশ এক প্রকার নিশ্চিত ওই ঘটনা কোনো খুনের নয়। নেহাতই আধ্যাত্মিক কারণেই তারা আত্মহত্যা করেছেন।

আরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।