একই পরিবারের ১১ জনের মৃত্যুর নেপথ্যে গুপ্ত সাধনা?
গেল রোববার ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি বাড়ি থেকে একই পরিবারের ১১ জন সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে গুপ্ত সাধনার প্রভাবে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মিললেও কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
ওই পরিবারের আত্মীয়েরা কেউই বিশ্বাস করতে রাজি নন, ওই পরিবারের আত্মীয়েরা কোনো তান্ত্রিকের খপ্পরে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।
ওইদিন যাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বাড়ির গৃহকর্ত্রী নারায়ণী দেবীর তিন ছেলে, দুই মেয়ে। নারায়ণী দেবী, তার দুই ছেলে ভবনেশ, ললিত, মেয়ে প্রতিভা। ভাইবোনদের মধ্যে বেঁচে রয়েছেন একমাত্র ছোট বোন সুজাতা আর দীনেশ।
সুজাতা বলছেন, ‘আমার মা, দুই ভাই, বোন, তাদের ছেলেমেয়েদের কেউ খুন করেছে। আর পুলিশ তন্ত্রমন্ত্রের গল্প বানাচ্ছে।’
কিন্তু এই গুপ্ত সাধনার বিষয়টি যারা সামনে তুলে ধরছেন তারা বলছেন, হিন্দু শাস্ত্রে আত্মহত্যা মহাপাপ। আত্মহত্যা করলে মানুষ নরকে যায়। কিন্তু অনেকের মতে, তন্ত্র সাধনায় কোনো কোনো অতি-হঠকারী সাধক মনে করেন শরীর জগতের অংশ। তাকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে আত্মাকে মুক্ত করলে, সে আত্মা জন্ম-মৃত্যুর চক্রে অংশ নেয়। আবার জন্ম হয় সেই ব্যক্তির। সঠিক তন্ত্র সাধনায় এটি সম্ভব। তাই হিন্দু ধর্মে আত্মহত্যার অনুমতি না থাকলেও বিশেষ বিশেষ তন্ত্র সাধনায় এর চল রয়েছে।
সাধক বাসুদেব ভট্টাচার্য কামাখ্যায় গিয়ে তন্ত্র সাধনা করেছিলেন। সাধনা করে তিনি না কি তাঁর নাতি সর্বানন্দ হয়ে জন্মাবেন এমন বার্তা পান। প্রচলিত ধারণা, সাধক রামপ্রসাদও এই সাধনা করেছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে গোটা পরিবার কী ভাবে এ সব বিশ্বাস করে ফেলল
আর মনোরোগ চিকিৎসকের মতে, ওই পরিবারের উপরে কোনো তান্ত্রিক প্রভাব খাটিয়ে থাকতে পারেন।
ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের মতে, উত্তর ভারতীয় কিছু তান্ত্রিক শরীর ত্যাগ করার জন্য গোপনে অনেকে মিলে আত্মহত্যা করে পুনর্জন্মের কথায় বিশ্বাস করেন। কামাখ্যা, ইনদওরে মহাকালেশ্বর, বারাণসীর কালভৈরবের মন্দিরেও বহু তান্ত্রিক অতীতে শব সাধনা করতেন। তন্ত্রসাধকেরা অবশ্য নিজেরা মানুষকে হত্যা করেন না। তারা শবকে সামনে রেখে সাধনা করেন।
জ্যোতিষ ডি পি শাস্ত্রীর যুক্তি, ‘এভাবে নশ্বর শরীর থেকে আত্মার মুক্তি হয় না। মুক্তির কোনো শর্ট কার্ট মেথড নেই।’ আনন্দবাজার।
এনএফ/পিআর