জনমানবশূন্য রাখাইন, আতঙ্কে ফিরতে চান না রোহিঙ্গারা
প্রত্যেকদিন দেড়শ জন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্বাগত জানাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরগুলো প্রস্তুত। কিন্তু অধিকাংশ দিনই ফাঁকা থাকে এই শরণার্থী শিবিরগুলো। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা ভয়ে সেখানে ফিরছেন না। যদিও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে ভিন্ন।
শুক্রবার মিয়ানমার সরকারের আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের রাখাইন অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে শিবিরের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানাতে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সাংবাদিকদের দু’দিনের এই সফরের সময় জনমানবশূন্য শিবিরে দাঁড়িয়ে রাখাইনের অভিবাসনবিষয়ক পরিচালক এনগা খু রা বলেন, শরণার্থীদের গ্রহণ করার জন্য আমরা জানুয়ারি থেকেই প্রস্তুত। প্রত্যেকদিন শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের জন্য বায়োমেট্রিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য নথিপত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকেন কর্মকর্তারা। কিন্তু সাংবাদিক ও সফররত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানানো ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ থাকে না।
গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রক্তক্ষয়ী অভিযানে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও রাখাইনের উত্তরে পুনর্বাসন করা হয়েছে ২০০ জনেরও কম রোহিঙ্গাকে।
রোহিঙ্গা নারীরা বলছেন, তারা নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের নিষ্ঠুর চিত্র তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মিয়ানমার বলছে, শুধুমাত্র রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাই তাদের অভিযানের লক্ষ্য হয়েছে। যদিও সন্দেহভাজন কিছু রোহিঙ্গাকে হত্যার অভিযোগ স্বীকার করেছে সেনাবাহিনী।
গত এপ্রিলে মিয়ানমার সরকার জানায়, তারা পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারকে ফেরত নিয়েছে। তবে পরবর্তীতে এ নিয়ে বেশ সমালোচনা শুরু হয়। সেই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, ওই পরিবারটি শূন্যরেখা থেকে রাখাইনে ফেরত গেছে।
চলতি মাসে কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমার। তারা বলছে, নৌকায় করে বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টার সময় বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটকের পর তাদের শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়। পরে তাদের স্বজনদের সঙ্গে বসবাসের জন্য রাখাইনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বলছে, এটি বৈধ প্রত্যাবাসন নয়।
বাংলাদেশের শরণার্থীবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বাবার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, এখনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এদিকে, রোহিঙ্গারা বলছেন, তাদেরকে যদি বৈধ উপায়ে রাখাইনে ফেরত এবং পুনর্বাসন করা হয় তাহলে তারা বাংলাদেশে থাকতে চান না।
এসআইএস/আরআইপি