বাঙালিদের কেন আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে আসামে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ২৭ জুন ২০১৮

ভারতীয় নাগরিকত্ব যাচাই করে তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় রেজিস্টার অফ সিটিজন। চূড়ান্ত হবে ৩০ জুন। প্রক্রিয়া চলেছে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে। এতে আসামে হিন্দু-মুসলিম বাঙালি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে আসামে ভারতীয় নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে গত বছর দুই ধরে। লক্ষ্য, প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা, বিশেষ করে যারা ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের পর এসেছে। ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজন (এনআরসি) দিন দুয়েক আগে এর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে।

এই তালিকা থেকে বাদ গেছে প্রায় ৭০ লাখ বাংলাভাষী অধিবাসী। এই ৭০ লাখের মধ্যে ২৫ লাখ বাঙালি হিন্দু এবং বাকিটা বাঙালি মুসলিম। এই তালিকা চূড়ান্ত হবে আগামী ৩০ জুন। এই প্রক্রিয়ার নিয়মবিধি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে আসামের সংখ্যালঘু বাঙ্গালি সম্প্রদায়।

তাদের অভিযোগ এনআরসি দরকার মতো তাদের নিয়মবিধি পরিবর্তন করেছে। এর ফলে মুসকিলে পড়বে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়, বলেছেন সর্ব ভারতীয় সংযুক্ত গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেনারেল সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা একটা জিনিস দেখছি, এনআরসি-এর জন্য যেসব জিনিস লাগে তার একটা হলো ২০০৩ সালের সিটিজেনশিপ রুল।

আসামের সংশ্লষ্ট সব রাজনৈতিক, অ-রাজনৈতিক, সাহিত্য ও সাংস্কতিক তিক সংগঠনগুলি মিলিতভাবে একটা মডেল রুল তৈরি করে, যেটা পাশ হয় রাজ্য বিধানসভায়। অনুমোদন করে এনআরসি এবং সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এখন দেখছি আসাম সরকার নানাভাবে এর ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে। যেমন ধরুন ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সাল থেকে ৩০ জুনের আগে সেইসব নিয়মে ক্রমাগত পরিবর্তন করা হচ্ছে।

নতুন করে জারি করা হয়েছে অনেক বিজ্ঞপ্তি। অন্যদিকে দেখুন, সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, এনআরসি-এর তালিকায় ডি-ভোটার আসবে না। ডি-ভোটার মানে যাদের নাগরিকত্ব সন্দেহজনক এক কথায় বিদেশি। অথচ এনআরসি-এর ডি-ভোটার তালিকায় তাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কথা হচ্ছে, বিদেশি বলে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, সেটা প্রমাণিত হয়নি। তা যদি না হয়ে থাকে তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে কেন?

আসামে তথাকথিত সন্দেহভাজন বিদেশির সংখ্যা প্রায় ৯২ হাজার। এদের মধ্যে ৫৩ হাজারকে তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগও দেওয়া হয়নি, মানে কোনো নোটিফিকেশন দেওয়া হয়নি। কাজেই তারা যে বিদেশি সেটা প্রমাণিত হয়নি বলে জানান নিখিল ভারত সংযুক্ত গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেনারেল সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম।

একই আশঙ্কা কথার জানান শিলচর-ভিত্তিক হিন্দু লিগ্যাল সেলের ধর্মানন্দ দেব। ১৯৭৯ সালে আমরাই হয়েছিলাম প্রধান নিশানা, যখন আমাদের নাগরিকত্ব নিয়ে আঙুল তোলা হয়। তকমা দেওয়া হয় ডি-ভোটার, অর্থাৎ ডাউটফুল ভোটার৷ প্রায় ৯০ শতাংশ ডি-ভোটা বাঙালি হিন্দু। আসামে ২৮ শতাংশ অধিবাসী বাংলা ভাষাভাষী। বেশির ভাগটা থাকে বরাক উপত্যকার তিনটি জেলায়। ল যে প্রশ্নটা উঠে আসছে, তাহলে কেন এই বিভাজন? কেন আলাদাভাবে বাংলাভাষীদের চিহ্নিতকরণ? এর উদ্দেশ্যটাই বা কী?

এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে গঠন করা হয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি (সিআরপিসিসিএ)। এনআরসি-এর গূঢ় অভিসন্ধি তুলে ধরাই এই সংগঠনের লক্ষ্য। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে আসামের ২৮ শতাংশ বাঙালি পড়বে বিপাকে। এটা ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সর্ব আসাম ছাত্র ইউনিয়নের উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য।

রাজ্যের কংগ্রেস নেতা অরুনাভ ঘোষ মনে করেন, এতে আসামের বাঙালিদের উদ্বেগ বাড়বে। বাঙালি প্রেশার গ্রুপের সদস্য গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, আসামকে একটা গবেষণাগার করে তাতে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে এনআরসি। এরপর সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গে তা প্রয়োগ করা হবে। ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজনকে থামানো দরকার। তবে যেহেতু পুরো প্রক্রিয়াটা চলছে দেশের শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে। তাই কেউ নাক গলাতে সাহস পাবে না।

এর বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আসামের সবথেকে শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন আসু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠাতে আন্দোলন শুরু করে। একটা ভীতির মানসিকতায় মনে করা হয়, এই অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশে আসামের নিজস্ব স্বতন্দ্র পরিচয় বিঘ্নিত হবে। আন্দোলন শেষ হয় আসাম চুক্তিতে। ডিডব্লিউ।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।