‘বিশ্বাস করতে পারছি না সৌদিতে গাড়ি চালাচ্ছি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:২৫ পিএম, ২৪ জুন ২০১৮

গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ার পর রোববার (২৪ জুন) মধ্যরাতে সৌদি আরবের রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দেশটির শত শত নারী। জেদ্দাহর গৃহিনী রোয়া আলতাওয়েলি এই নারীদের একজন। সৌদি আরবে ঐতিহাসিক এক নতুন যুগের সূচনায় গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন তিনিও।

রোয়া বলেন, আমি আজ অন্যান্য রাতের চেয়ে বেশি জেগেছি। আমি এতটাই উত্তেজিত ছিলাম, ঘুমাতে পারি নাই। আজ আমি গাড়ি চালাচ্ছি এবং এবারই প্রথম গাড়ির পেছনের আসনে বসি নাই। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের পেছনে বসেছি। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে, জেদ্দাহর রাস্তায় আজ গাড়ি চালাতে যাচ্ছি।

‘নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে অবশেষে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সৌদি আরব। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর ছবি ও ভিডিও দেখার জন্য মধ্যরাতের পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ছিলাম।’

‘প্রথম দিনের সড়ক ছিল একটু শান্ত- স্কুলে গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। প্রথমবার গাড়ি চালানোর সময় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকাটা খারাপ কিছু নয়। কিছু কৌশল, কিছু মানুষের নৈতিক সমর্থন ও বাবার সাহচর্যে আমি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম।’

saudi-arab-women

‘পথে আমি পুলিশকে অতিক্রম করেছি, কিন্তু গাড়ি চালানোর জন্য আমি ভীত ছিলাম না। আমার লাইসেন্স আছে এবং বৈধভাবে সৌদি আরবে গাড়ি চালাচ্ছি। গাড়ি চালানোর সময় পথে থেমে কফি পান করেছি, আমিই প্রথম নারী চালক যে বারিস্তা (এক ধরনের কফি) পান করেছি।’

‘বাহরাইনে প্রসূতিবিদ্যা নিয়ে ডিপ্লোমা করার সময় অামি গাড়ি চালাইতাম। ২০০৫ সাল থেকে আমার গাড়ি চালানোর লাইসেন্স আছে। আন্তর্জাতিক লাইসেন্সও আছে; আমি দুবাই, পর্তুগাল ও যুক্তরাষ্ট্রে অবকাশযাপনে গিয়ে গাড়ি চালাতাম।’

বাহরাইনের লাইসেন্স রূপান্তর করা এখানে সহজ হলেও গাড়ি চালানোর অনুমতির পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। চাহিদা এতবেশি যে, জুলাইয়ের আগেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমি এবং আমার বোন কয়েক সপ্তাহ আগে সেই সুযোগ পাই এবং সৌদিতে প্রথমবারের মতো গাড়ি চালানোর অনুমতি মেলে।

বাবা এবং ভাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমার ছোট বোনও লাইসেন্স পেয়ে যায়। যার ফলে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা গাড়ি চালিয়েছি।

Saudi-women-1

আমি একজন ধাত্রী। ব্রিটেন থেকে ধাত্রীবিদ্যায় পিএইচডি করেছি। ইউরোপ এবং উন্নত দেশগুলোতে ধাত্রীদের গাড়ি চালানো অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষার পরিবর্তে একজন মাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য গাড়ি চালান ধাত্রী। এই চাকরি করার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা জরুরি।

‘আমি এখন জেদ্দাহর একটি হাসপাতালের কাছাকাছি। এই হাসপাতালে কাজ করছি। হাসপাতালের প্রধান প্রবেশপথে যখন পৌঁছাই তখন কেউই আমাকে বিরক্ত করেনি অথবা আমার দিকে চেয়ে থাকেনি। আমার তখন মনে হয়েছে এখানে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি চালাচ্ছি।’

‘এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আজ ঐতিহাসিক দিন এবং এই দিনটি সৌদি আরবে আরো এমন অনেক ঐতিহাসিক দিনের অঙ্গীকার নিয়ে এসেছে।’

এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।