সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ


প্রকাশিত: ১১:১৫ এএম, ০৩ আগস্ট ২০১৫

পর্যটন শহর বাগেরহাটের সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াতকে সহজ করতে কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কের অধিকাংশ এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কের এ করুন দৃশ্য। রাস্তায় বড়বড় গর্ত দেখে আতকে উঠছেন রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ যাত্রী ও পরিবহনের চালকরা।

৫৩ কিলোমিটার সড়কের ৪০ কিলোমিটার সড়ক এখন শতশত খানাখন্দে পূর্ণ। ফলে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে এসব খানাখন্দ পরিণত হয়েছে ছোটখাট ডোবায়। আর এসব ডোবা বা গর্তে আটকা পড়ছে গাড়ি। ২০১০ সালে একনেকের সভায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে এ সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নিত করনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে এ মহাসড়কের পুননির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২৩ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা।

সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে এতদাঞ্চলের ৩টি উপজেলার প্রায় ৬লক্ষ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সকালে যাত্রা শুরু করে কখন পৌঁছাবে তার নির্দিষ্ট সময় নেই। সামান্য ৫৩ কিলোমিটার এ পথ পাড়ি দিতে কখনো দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সময় ও দুর্ভোগের কথা ভেবে অনেকেই ওই সড়কে যেতে চান না। জরুরি কোনো কাজা ছাড়া মোরেলগঞ্জের সড়কপথে আগন্তুকের দেখা মেলা ভার। খানাখন্দে ভরা এ রাস্তা দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে শতশত যাত্রীবাহী যানবাহন। এ রুটে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী বেশ কিছু পরিবহন সরাসরি শরনখোলা থেকে চলাচল করছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে।

মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, মোরেলগঞ্জ থেকে বাগেরহাট জেলা সদরে আসতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। মাত্র ৪০ কিলোমিটার পথ আসতে সময় লাগে সাড়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। প্রায় সময়ই খানাখন্দের কারণে পায়ে হাঁটতে হয় অনেক পথ। সিডরের পর  আমাদের একমাত্র দাবি ছিল সড়কটির নির্মাণ ও সংস্কার কাজ। তা আর হল না।

তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সাইনবোর্ড থেকে মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রাস্তার। ৫৩ কিলোমিটার রাস্তার এ অংশের এতটাই দূরাবস্থা যার ফলে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তার দুরাবস্থার প্রতিবাদ জানান, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার এই সড়কে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুদিন শ্রমিকরা যানচলাচল বন্ধ করে দেন। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দুদিন পর জনদুর্ভোগের কথা ভেবে আবার ভাঙা রাস্তায় গাড়ি নামাতে বাধ্য হন শ্রমিকরা।



যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার ও চালকরা জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালাতে হয়। অনেক সময় গর্তের মধ্যে গাড়ির চাকা আটকে যায়। এর ফলে যেমন যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় তেমনি তেমনি যানবাহনের ক্ষতি হয়। বর্তমানে বর্ষায় সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। তাই তারা সরকারের কাছে দ্রুত রাস্তার নির্মান কাজ সম্পন্নের দাবি জানান।

বাগেরহাট আন্তঃজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার এ বাকি জাগো নিউজকে বলেন, খানাখন্দে আর বাঁকে বাঁকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বাগেরহাট থেকে মোরেলগঞ্জগামী যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। বর্ষা মৌসুম আসার পর সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মোটর শ্রমিক ও চালকরা এখন এ সড়কে বাস চালাতে চান না। মোটর শ্রমিক, চালক ও যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা জন্য এ সড়কটির দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তাটির যথা নিয়মে কাজ না করার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। আদালতে মামলার কারণে কয়েক বছর এ সড়কটির নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ায় চলতি অর্থ বছরে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করে নতুন দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।

শওকত আলী বাবু/এমজেড/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।