ম্যারাথন সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, ১২ জুন ২০১৮

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকের আয়োজন করায় সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুংকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবিশ্বাস্য আয়োজক হিসেবে সিঙ্গাপুরকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীনের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের ক্যাপেল্লা হোটেলে ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হন কিম জন উন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠকের পর এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের ম্যারাথন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এটিই ট্রাম্পের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সংবাদ সম্মেলন; যেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্ন নিয়েছেন তিনি। তার সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ এ ধরনের সংবাদ সম্মেল ছিল গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি।

সিবিএস নিউজের হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি মার্ক নোলার বলেছেন, ‘সময়ের হিসেবে এটি ট্রাম্পের দীর্ঘ সময়ের সংবাদ সম্মেলন; যা স্থায়ী ছিল এক ঘণ্টা ৫ মিনিট। এর আগে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্পে দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনের স্থায়ীত্ব ছিল এক ঘণ্টা ১৭ মিনিট।

সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে তার এই বৈঠককে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, প্রকৃত পরিবর্তন যে সম্ভব তা এতে প্রমাণিত হয়েছে। কিমের সঙ্গে তার ওই বৈঠককে আন্তরিক, খোলামেলা ও ফলপ্রসূ বলে বর্ণনা করেন।

মার্কিন এই প্রেসিেডেন্ট বলেন, আমরা একটি নতুন ইতিহাস, একটি নতুন অধ্যায় শুরু করার জন্য প্রস্তুত। আমরা একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছি; যাতে কোরীয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে উত্তর কোরিয়ার দ্বিধাহীন অঙ্গীকার রয়েছে।

‘চেয়ারম্যান কিম আমাকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া ইতোমধ্যে প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার একটি স্থাপনা ধ্বংস করতে শুরু করেছে।’

‘আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি; যেখানে সব কোরীয় ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করবেন। যেখানে যুদ্ধে অন্ধকারকে দূর করবে শান্তির আলো। এটাই হবে যৌক্তিক এবং এটা আমাদের নাগালের কাছে। মানুষ মনে করেছিল, এটা কখনই হবে না।

তবে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি তিনি কমাবেন না; তবে যুদ্ধের খেলা বন্ধ করছেন তিনি।

তিনি বলেন, শিগগিরই কোরীয় যুদ্ধের অবসান ঘটবে। বৈঠকের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে; সিঙ্গাপুরের জাতীয় দৈনিক দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের জেরেমি অ ইয়ংয়ের এক প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমরা এই চুক্তি নিয়ে আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। বিস্তারিত জানার জন্য আগামী সপ্তাহে (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা) জন বোল্টনের সঙ্গে আমরা বসবো। আমরা ক্ষুদ্র পরিসরে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীনের সঙ্গে কাজ করছি।

‘আমি আবারো আনন্দের সঙ্গে এই দেশে আসবো। তোমাদের প্রধানমন্ত্রী চমৎকার ভালো মানুষ। তিনি খুবই অতিথিপরায়ন।’

বহুল কাঙ্ক্ষিত ওই বৈঠকে কিমের সঙ্গে মানবাধিকার নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ বিষয়টি নিয়ে আরো বিশদ আলোচনা হবে। নিষ্ঠুর কোরীয় যুদ্ধে আটকে পড়াদের ফেরত পাওয়ার আকুতি জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অসংখ্য মানুষের কল, চিঠি ও টুইট আমার কাছে আসে। তারা তাদের ছেলে-মেয়ে, বাবা-মাকে ফেরত চান।

‘আমি এটি নিয়ে কথা বলেছি। বন্দীরা শিগগিরই ফেরত যাচ্ছেন...৬০০০ মানুষকে ফেরত পাঠানো হবে।’

সংবাদ সম্মেলনের আগে কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে বিস্তৃত এক যৌথ নথিতে স্বাক্ষর করেন এ দুই নেতা। নথিতে স্বাক্ষরের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া ‘খুব, খুব শিগগিরই’ শুরু হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।

ট্রাম্প-কিমের ঐতিহাসিক এ বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মাঝে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হলো মাত্র। তবে উত্তর-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তায় পরিবর্তন আনতে পারে এই বৈঠক। ১৯৭২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের বেইজিংয়ে ঐতিহাসিক এক সফরের পর চীনের রূপান্তর ঘটে।

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বলেন, দুই নেতা ঐতিহাসিক বৈঠক করেছেন এবং অতীতকে পেছনে ফেলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। বিশ্ব বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাবে। ট্রাম্প বলেন, তিনি কিমের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করেছেন এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এই সম্পর্ক হবে একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের।

সূত্র : দ্য স্ট্রেইটস টাইমস, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।