নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া শুরু করেছে সৌদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২২ পিএম, ০৫ জুন ২০১৮

নারীদের প্রথমবারের মতো ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া শুরু করেছে সৌদি আরব। নারীদের ওপর গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার পর এবারই প্রথম ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া শুরু হলো। আর কিছুদিন পর থেকেই নারীরা রাস্তায় স্বাধীনভাবে গাড়ি চালাতে পারবেন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, নারীদের গাড়ি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে এ লাইসেন্স ইস্যু করা হচ্ছে। আগামী ২৪ জুন নারীদের গাড়ি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে কঠোর রক্ষণশীল বলে পরিচিত সৌদি আরব।

সৌদি কর্তৃপক্ষ এমন এক সময়ে এ সিদ্ধান্ত নিল, যখন নারী অধিকারকর্মীদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় চলছে। সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, যিনি একজন প্রগতিশীল সংস্কারক হিসেবে দাবি করে থাকেন, তার নেতৃত্বে সৌদিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

সম্প্রতি তিনি সৌদিতে সিনেমা হল চালুর অনুমতি দিয়েছেন। এখন থেকে নারীরা পুরুষদের সাথে সিনেমা দেখতে পারবে। ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতাও খর্ব করেছেন যুবরাজ। সম্প্রতি ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে সৌদি রাজকুমারীর মডেল হওয়াকে কেন্দ্র করে মুসলিম বিশ্বে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন (সিআইসি) বলছে, ১০ সৌদি নারী সোমবার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, যখন তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। আশা করা হচ্ছে, সামনে সপ্তাহে আরও ২ হাজার নারীকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হবে।

এদিকে সৌদি সরকারি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, বাস্তব পরীক্ষার (প্রাকটিক্যাল টেস্ট) সম্মুখিন হতে হবে-এমন শর্তের অধীনে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তবে সংস্থাটি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হয়নি।

রেমা জাওয়াদ নামের এক নারী সিআইসিকে জানান, আমার স্বপ্ন সত্যি হলো যে, আমি এখন থেকে সৌদিতে গাড়ি চালাতে পারব। আমি স্বাধীনভাবে গাড়ি চালাতে পারব। এ স্বাধীনতা আমাকে দেয়া হয়েছে। এই নারীর আগে লেবানন ও সুইজারল্যান্ডে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।

নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে, সৌদি গত সপ্তাহে যৌন হয়রানিকে অপরাধ ঘোষণা করে ঐতিহাসিক এক আইন পাস করেছে। এ আইনের অধীনে কেউ যৌন হয়রানির অভিযুুক্ত হলে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সৌদি আরব বিশ্বের মধ্যে একমাত্র দেশ যে দেশে নারীরা গাড়ি চালাতে পারেন না। আর এ কারণেই চরম সমালোচনার সম্মুখিন হতে হয়েছে। নারীদের গাড়ি চালাতে না দেয়ার বিষয়টি নারীদের প্রতি জুলুম হিসেবে দেখা হতো।

সৌদিকে আধুনিক ঢঙে ঢেলে সাজাতে যুবরাজের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হচ্ছে। তবে সম্প্রতি নারী অধিকারকর্মীদের আটক করায় সৌদি যুবরাজের এসব সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সৌদি কর্তৃৃপক্ষ বলছে, সৌদি রাজতন্ত্রের নিরাপত্তার স্বার্থে গত সপ্তাহে ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে

আটককারী নারীরা বেশিরভাগই বিভিন্ন অধিকার সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন। সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার দেয়া এবং রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থায় পুরুষদের অভিভাবকত্ব ব্যবস্থার অবসান চেয়ে তারা আন্দোলন করছিলেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিডল ইস্ট ডিরেক্টর অব ক্যাম্পেইনস সামাহ হাদিদ টুইট বার্তায় জানান, অবশেষে নারীদের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেয়া হলো এজন্য সৌদি কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ। তবে যারা এ অধিকার আদায়ের জন্য বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন করলেন, তাদের গাড়ি চালানোর পরিবর্তে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এখনই তাদের মুক্তি দেয়া।

সূত্র: এএফপি

এসআর/টিটিএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।