ভোট গণনা চলছে : নাজিবের কাঁধে মাহাথিরের নিঃশ্বাস

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি মালয়েশিয়া থেকে
প্রকাশিত: ০৮:২৯ পিএম, ০৯ মে ২০১৮

মালয়েশিয়ায় ক্ষমতার পালা বদলে ১৪তম সাধারণ নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। বেসরকারি ফলাফলে এখন পর্যন্ত দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এগিয়ে রয়েছেন। তবে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে নাজিবের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাষ পাওয়া যাচ্ছে।

এর আগে, বুধবার সকাল ৮টা থেকে ৮ হাজার ৮৯৮টি পোলিং বুথে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন বলছে, অন্তত ৮৫ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচনে ২ হাজার ৩৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

এদিকে বুধবার ভোট গ্রহণের সময় জোহর বারু সিকোলাহ মেনেনগাহ জোহর জায়া-১ পোলিং কেন্দ্রে দু’জনকে মারধর করার অপরাধে পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খলিল কাদের।

media

কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের ২২২ আসনে এবং ১৩ রাজ্যের ১২টিতে ৫০৫ আসনে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। একটি রাজ্যে বুধবারই ন্যাশনাল ফ্রন্টকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

মালয়েশিয়া ভোটার রয়েছে প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ৩ লাখ ভোটার ৫ মে আগাম ভোট দিয়েছেন। বুধবার রাত সোয়া ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রাথমিক ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে নাজিব রাজাকের বারিসান ন্যাশনাল (বিএন); ৪৬ আসনে জয়ী হয়েছে বিএন। অন্যদিকে মাহাথির মোহাম্মদের পাকাতান হারাপান পেয়েছে ৪৩ আসন।

মালয়েশিয়ায় বুধবারের সাধারণ নির্বাচনে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সমর্থন নিয়ে জয়ের প্রত্যাশা করছে বিরোধী দল পাকাতান হারাপান। আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বিরোধী দলের হয়ে লড়াই করায় এই প্রত্যাশা আরও জোরালো হচ্ছে।

media

এর আগে মাহাথির মোহাম্মদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার এক সময়ের শত্রু কারারুদ্ধ বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম।

নাজিবের আর্থিক কেলেঙ্কারি দিন দিন বেড়ে চলায় অবসরে চলে যাওয়া তার এক সময়ের গুরু মাহাথির মোহাম্মদ বিরোধী জোটে ভিড়েছেন। হাত মিলিয়েছেন পুরোনো শত্রু আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে।

মালয়েশিয়ার ৩ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মালয় জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম। তারা নির্বাচনে বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। এই মালয়রাই নাজিবের জোট বারসিয়ান ন্যাশনালের সমর্থনের মূল ভিত্তি। বিএন দেশটির আদিবাসী চীনা ও আদিবাসী ভারতীয়দের চেয়ে মালয়দের বেশি সুবিধা দেয়াসহ সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

কিন্তু টানা ২২ বছর মালয়েশিয়া শাসন করা মাহাথির বিরোধী জোটে ভেড়ায় নাজিবের সমর্থনের ঘাঁটিতে বড়সড় একটা ধাক্কা দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ওপর এমনিতেও ক্ষোভ জন্মেছে জনগণের।

media

গত মাসে প্রকাশিত জরিপে বলা হয়েছে, বিএন ৮ শতাংশ মালয় সমর্থন হারিয়েছে। কিন্তু মালয়দের সমর্থনে পরিবর্তন আসা সত্ত্বেও বিরোধী দল জয়ী হবে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না অনেক বিশ্লেষকই।

উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মালয়েশিয়ায় ইউএমএনও নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে কখনোই হারেনি। ইউনিভার্সিটি অব তাসমানিয়ার মালয়েশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জেমস চিন বলেন, সমর্থন পরিবর্তন করা অনেক ক্ষেত্রই কঠিন ঠেকতে পারে অনেক মালয়ের কাছে।

গত সোমবার কুয়ালালামপুরের হাসপাতাল থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘পরিবর্তনের জন্য জনগণের আন্দোলনে শামিল হতে আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি মাহাথিরকে ভোট দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। সম্প্রতি তার কাঁধের অপারেশন হয়েছে। কারারুদ্ধ হলেও বিগত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালেই আছেন আনোয়ার।

media

সোমবার রাতে সরকারপন্থী টেলিভিশনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাজিব রাজাক। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ঘাঁটি এখনো শক্তিশালী ও অক্ষত। এ কারণে আমি আশাবাদী। কারণ আমাদের সেই সামর্থ্য আছে।’

স্বাধীনতা লাভের পর মালয়েশিয়ায় এটি ১৪তম নির্বাচন। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সব আসনে নির্বাচন হবে। নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা ২২২। যদিও দেশটির উচ্চকক্ষের ৭০টি আসনের সব নিয়োগপ্রাপ্ত, নির্বাচিত নয়।

পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে নাজিবের ক্ষমতাসীন জোট ১৩৩ আসন পেয়েছিল। বিরোধী দলটি আশা করছে, তারা বিএনের আসন কমাতে পারবে এবং অন্তত ১১২ আসন পাবে। আর তাহলে সরকার গঠন করতে পারবে বিরোধী দল।

এমআরএম/এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।