আসাদবিরোধী আন্দোলন থেকে আইএসের জঙ্গি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৪২ পিএম, ০৭ মে ২০১৮

সম্প্রতি বিবিসির সাথে কথা হয় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) এক জঙ্গির। নাম গোপন করে কথা বলেছেন তিনি।

তার সঙ্গে বিবিসির কথোপকথোনে উঠে এসেছে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছেন তিনি এবং এ জন্য তার কোনো অনুতাপও নেই। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ‘আমি কখনো কোনো বেসামরিক লোক বা নিরপরাধ লোককে হত্যা করিনি।’

আইএসের এই ঘাতক শুরুতে ছিলেন সিরিয়ার বাশার আসাদবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার এক বিক্ষোভকারী। নানা সংগঠন ঘুরে একসময় তিনি একজন সশস্ত্র যোদ্ধায় পরিণত হন। তবে শেষ পর্যন্ত আইএসে থাকতে পারেননি তিনি। যে আইএসের জন্য শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছেন সেই আইএস থেকেই এখন পালিয়ে তুরস্কে আছেন তিনি।

যেভাবে জঙ্গি হলেন
২০১১ সালে সিরিয়ান বিপ্লবের যখন সূচনা, তখন তিনি ছিলেন শান্তিপ্রিয় একজন মানুষ। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘আমি কিছুটা ধার্মিক ছিলাম, তবে খুব গোঁড়া ছিলাম না।’

সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছিলেন তিনি। আর তার জন্য নিরাপত্তাবাহিনীর গ্রেফতার দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়। কারাগারেও থাকতে হয় এক মাস। তবে কারাগারে ঢোকানোর আগে তাকে এত নির্যাতন করা হয় যে তিনি পিঠের ব্যথায় হাঁটতে পারতেন না।

নির্যাতন করা একজন নিরাপত্তা রক্ষী কথা তিনি বলেন, যে তাকে বাশার আল আসাদের একটা ছবির সামনে হাঁটু মুড়িয়ে বসিয়ে বলতো, তোমার ঈশ্বর মারা যাবে, কিন্তু বাশার আসাদ মারা যাবে না। সে টিকে থাকবে।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ার অপরাধে তাকে সিলিং থেকে বেঁধে ঝোলানো হতো, কাপড় খুলে পেটানো হতো। সেই রক্ষীটা বলতো, ‘আমি তোমাকে ঘৃণা করি, আমি চাই তুমি আমার হাতে মরো।’

তিনি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে যদি আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে আমি যেভাবেই হোক ওকে হত্যা করবো।’ ছাড়া পাওয়ার পর তিনি করেছিলেনও তাই।

এরপর আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট আল-নুসরা ফ্রন্টে যোগ দেন তিনি। তখন আইএস ছোট সংগঠন। সেই আইএসই ২০১৪ সালে রাক্কা দখল করে নিয়ে খেলাফতের রাজধানী ঘোষণা করে। সেখানে তারা কয়েম করে এক ত্রাসের রাজত্ব।

বিদ্রোহী নেতাদের টাকা এবং বড় পদ দিয়ে ‘কিনে’ নিতে শুরু করে আইএস। প্রস্তাব পেয়ে তিনি বুঝলেন, প্রত্যাখ্যান করার অর্থ হলো মৃত্যু পরোয়ানায় সই করা। কাজেই তিনি এক ফন্দি আঁটলেন।

‘আমি রাজি হলাম এবং আল-নুসরার নেতা আবু আল-আব্বাসের অনুমতি নিয়ে একজন ডাবল এজেন্ট হয়ে গেলাম। আমি তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতাম, কিন্তু গোপনে তাদের সদস্যদের অপহরণ করে হত্যা করতাম। আবু আল-আব্বাস যা চাইতো তা আমি আইএসের কাছে ফাঁস করে দিতাম। এর মধ্যে কিছু সঠিক তথ্যও থাকতো, যাতে আইএস আমাকে বিশ্বাস করে। কিন্তু পাশাপাশি আমি তাদের গোপন তথ্যগুলো জেনে নিতাম।’

এভাবে তিনি পরিণত হলেন ইসলামিক স্টেটের একজন ঘাতকে। তিনি বলছেন, আইএসের হয়ে অন্তত ১৬ জনকে হত্যা করেছেন, তাদের বাড়িতে ঢুকে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল দিয়ে।

তিনি বলছেনন, আইএসের আমিররা নতুনত্ব ভালোবাসতো। কিছুদিন পর পরই তাদের নিজেদেরই কেনা লোকদের তারা হত্যা করে তাদের জায়গায় নতুন লোক বসাতো। কখনো বলতো, মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের হামলায় সে মারা গেছে। কখনো কখনো সেটা বলার পরোয়াও করতো না।’

মাসখানেক পরই তিনি বুঝলেন, আইএস শিগগিরই তাকেও মেরে ফেলবে। ফলে ঘাতক নিজেই প্রাণের ভয়ে পালালেন, একটা গাড়ি নিয়ে দেইর আল-জুর চলে গেলেন, তারপর সেখান থেকে গেলেন তুরস্কে। বিবিসি বাংলা।

এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।