বিএনপিও যুদ্ধাপরাধীদের দল!


প্রকাশিত: ০৫:২৬ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৫

রায়টি প্রত্যাশিতই ছিল। রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকুক এটাই চেয়েছে দেশের জনগণ। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে অপরাধ করেছে এবং পরবর্তী ৪০ বছর ধরে যে দম্ভ দেখিয়ে চলেছিলেন সাকা চৌধুরী তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য। যেহেতু এরচেয়ে আরো কোনো কঠিন শাস্তি দেশের প্রচলিত আইনে নেই তাই এ রায়ই আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।

রাজনীতিতে নোংরা ভাষা ব্যবহার, উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, বেয়াদবি, অশ্লীলতার চর্চা সব নেতিবাচক উদাহরণই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই ঘৃণিত সাকার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্যে দিয়ে রাজনীতি থেকে অশ্লীলতা বিদায় নেবে বলেই আশা করি।

এই কলঙ্কিত ব্যক্তিটিকে নিয়ে বিএনপির আচরণের কোনো ব্যাখ্যা আমি পাচ্ছি না। বিএনপির মতো বৃহৎ এবং জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল যুদ্ধাপরাধীর দায় কেন নিচ্ছে? বরাবরই বিএনপি রাজাকারদের পক্ষ নিয়েছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, কিন্তু তারা বিচার চায়না এটা স্পষ্ট করে কখনো বলেনি, বিএনপি চেয়ারপার্সনের একজন উপদেষ্টা যুদ্ধাপরাধীদের মামলায় উকালতিও করছেন- সবই মানলাম। কিন্তু সাকা চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করার পরই তাকে বিএনপি কেন সরিয়ে দিলো না? এতোদিন জামাতকে বলা হতো যুদ্ধাপরাধীদের দল। এখন বিএনপিও সেই অভিযোগে অভিযুক্ত। কারণ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।

২০১০ সালের ২৬ জুলাই সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। তখন তিনি বিএনপির সংসদ সদস্যও ছিলেন। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। তিনিই বর্তমান বিএনপির একমাত্র নেতা যিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। বিএনপির উচিত ছিল ২০১০ সালে যখন যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাকে আটক করা হয় তখনই তার দলের পদ স্থগিত করা। আর যখন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হল তখন তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকাই উচিত ছিল না।

আমরা দেখেছি দল থেকে সরিয়ে দেয়া দূরে থাক তারা সাকা চৌধুরীর মতো অপরাধীর জন্য কান্নাকাটিও করেছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরের ১ তারিখ যখন আদালত তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয় তাৎক্ষণিকভাবে কী বলবে তা ভেবে ঠিক করতে পারছিল না বিএনপির নেতৃবৃন্দ। ওইদিন রাতভর বৈঠক করে পরদিন অর্থাৎ ২ অক্টোবর  সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি বলেছিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সুবিচার পাননি। এর প্রতিবাদে বিএনপি সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, রায়ে বিএনপি বিস্মিত হয়েছে। একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশে বিএনপির বিস্ময়ের কী কারণ থাকতে পারে তা বোধগম্য নয়। জামাতিরা তাদের নেতাদের ফাঁসির আদেশের প্রতিক্রিয়ায় হরতাল ডাকে আর বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ করে- পার্থক্য শুধু এইটুকুই।

স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ সেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর পুত্র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাবেক সেনাশাসক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বিএনপির নেতাও ছিলেন না। তিনি কোনোদিন জাতীয়তাবাদী হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দেননি। জামাতে ইসলামী ৭১-এ যে অপরাধ করেছে সমপরিমাণ অপরাধী মুসলিম লীগও। জামাতের সঙ্গে ওই দলটিও মুক্তিযুদ্ধের সময় নিষিদ্ধ হয়েছিল। জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসনের মধ্যে ১৯৭৯ সালে সেই মুসলিম লীগ থেকেই সাকা চৌধুরী সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এরপর আরেক সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনামালে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন। এরশাদ তাকে মন্ত্রীও করেছিলেন। স্বৈরাচারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সাকা চৌধুরী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করে সেই দল থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রথম তিনি  বিএনপির হয়ে নির্বাচন করে সাংসদ হন। এরপর  থেকেই তিনি বিএনপির সঙ্গে রয়েছেন। তার দীর্ঘ এই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দেখা যায় সাকা চৌধুরী কখনোই সাচ্চা বিএনপি ছিলেন না।

আগাগোড়া বিতর্কিত এই ব্যাক্তিটি বিএনপির চেয়ারপার্সনকে নিয়েও অশ্লীল কথা বলতে ছাড়েননি। কিন্তু তাকে দলে রেখে কী এমন ফায়দা পেয়েছে বিএনপি? এমনতো নয় যে তিনি অর্থকড়ি দিয়ে সাহায্য করতেন, বা দলকে সাংগঠনিকভাবে বিস্তৃত করে তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। তবে তার সঙ্গে পাকিস্তানিদের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। বিএনপি হয়তো সেই কারণে তাকে দলে রেখেছে। কিন্তু যখন এটা প্রমাণিত যে তিনি একজন যুদ্ধাপরাধী তখন সেই দায় না নিয়ে বিএনপি আদালতের প্রতি সম্মান দেখালে পারত। সেটা না করে বিএনপি প্রমাণ করেছে তারাও যুদ্ধাপরাধীদের দল। বিএনপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের চিন্তা চেতনা লালন করে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের পর সেটা আরো দৃঢ় হলো।

pintu

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।