মাঝ আকাশে ইঞ্জিন বিস্ফোরণ : যেভাবে বাঁচলেন বিমানের যাত্রীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩০ এএম, ২০ এপ্রিল ২০১৮

প্রায় সবাই সবার অপরিচিত, চেনাজানা নেই, তবু মাটি থেকে হাজার ফুট উচ্চতায় সবাই একসঙ্গে প্রার্থনা করছিলেন আর মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

তবে এই দৃশ্যের অল্প সময় আগেই এদেরই অনেকে সুডোকু খেলেছেন, বিমানের একঘেয়ে যাত্রায় কোন সিনেমা দেখেবেন তা ঠিক করছিলেন। নিউ ইয়র্ক থেকে ডালাসের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিমানটি ততক্ষণে মাটি থেকে ৩০ হাজার ফুট উঁচুতে উঠে গেছে।

বিমানটি উড্ডয়নের পর ২০ মিনিট অতিবাহিত হয়েছে, যাত্রীরা অপেক্ষায় আছেন এক্ষুণি তাদের হাতে হয়তো কোমল পানীয় দেয়া হবে।

এরপরই বিকট এক শব্দ। ফ্লাইট ১২৮০-এর ১৪৪ যাত্রী ও ৫ ক্রুর জন্য নেমে এল দুঃস্বপ্ন।

বিন্দুমাত্র কোনো ইঙ্গিত না দিয়েই হঠাৎ বিমানের একটি ফ্যান ব্লেড ভেঙে যাওয়ার পর বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় বিমানের বাম দিকের ইঞ্জিনটি।

সঙ্গে সঙ্গেই নেমে এল অক্সিজের মাস্ক। মুহূর্তের মধ্যে কয়েক হাজার ফুট নিচে নেমে গেল বিমানটি।

পরের ২০ মিনিট ছিল বিমানের যাত্রীদের জন্য জীবনকালের সবচেয়ে ভয়াবহ আতঙ্ক ২০ মিনিট। পাইলট ততক্ষণে বিমানের যা্ত্রাপথ বদল করে ফেলেছেন। ফিলাডেলফিয়াতে জরুরি অবতরণ করতে হবে তাকে। বিমান এবার ছুটছে ফিলাডেলফিয়ার দিকে। যাত্রীদের হাতে প্রার্থনা করে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপাায় নেই।

এক যাত্রী বলেন, আমি তো ভেবেছিলাম আমরা মরেই যাচ্ছি। আমি আমার স্ত্রীর হাত ধরে প্রার্থনা শুরু করি। যিশুর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের যেভাবেই হোক বাঁচান।

অন্যদিকে ককপিটে এক ইঞ্জিনে বিমান চালিয়ে যাত্রীদের বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন পাইলট।

media

পাইলট ট্যামি জো শাল্টস এ ধরনের চাক মোকাবিলা করতে জানতেন। নারীদের জন্য যখন নেভির বিমান চালানোর পথ খোলেনি, তখন সুপারসনিক এফ/এ-১৮ হর্নেটস উড়িয়েছেন তিনি।

এদিকে বিমানের জানালা ভেঙে ততক্ষণে আহত হয়েছেন যাত্রীরা।

এমন অবস্থায় শাল্টস ফিলাডেলফিয়া বিমানবন্দরে যোগাযোগ করে জানান তিনি জরুরি অবতরণ করতে চান। তিনি জানিয়ে দেন তার বিমানে আহত যাত্রী রয়েছে, অবতরণের পর তাদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার থেকে শাল্টসের কাছে জানতে চাওয়া হয় বিমানটিতে আগুন ধরেছে কি না।

শাল্টস জানান, না আগুন ধরেনি, কিন্তু বিমানের কিছু অংশ খুলে চলে গেছে।

বোরম্যান নামের এক যাত্রী জানতেন না কিভাবে অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। তাই তিনি শেষ পর্যন্ত সেটা ব্যবহারের আশা ছেড়ে দেন ও স্ত্রীর সঙ্গে বসে প্রার্থনা করতে থাকেন। এরই মধ্যে বোরম্যানের স্ত্রী আমান্ডা বিমানের ওয়াই-ফাই কানেক্ট করতে পেরে পরিবারের সদস্যদের ‘শেষ’ বার্তা দেন- দোয়া করো। আমাদের প্লেনের ইঞ্জিন বিস্ফোরণ হয়েছে। বিমান এখনও অবতরণের চেষ্টা করছে। আমার মেয়েদের বলো আমরা ওদের ভালোবাসি। যিশু আমাদের সাথে আছে।

শেষ পর্যন্ত ২০ মিনিটের বিভীষিকার পর ভালোভাবে অবতরণ করে বিমানটি। বেঁচে যান বিমানের যাত্রীরা বড় কোনো দুর্ঘটনার হাত থেকে।

বিমানটি শেষ পর্যন্ত বড়গ বিপদে থেকে রক্ষা পেলেও চাপ সহ্য করতে পারেননি ৪৩ বছর বয়সী রিয়োর্দান নামে এক যাত্রী। বিমানটি অবতরণের পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। তবে শারিরীক কোনো আঘাতে তার মৃত্যু হয়নি।

সূত্র : টাইসম অব ইন্ডিয়া।

এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।