আমাদের দায়িত্ব ও ইসলাম


প্রকাশিত: ০৪:৪৯ এএম, ২৮ জুলাই ২০১৫

`ওয়া মা খালাক্বতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইলা লিইয়া`বুদুন`। এবং আমি মানুষকে আমার ইবাদত ব্যতিত অন্য কোনো কাজে সৃষ্টি করিনি। অর্থাৎ আল্লাহর দাসত্ব করার জন্যই মানুষের সৃষ্টি। কিন্তু মানুষ কি আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করছে? আল্লাহর মানুষকে কি করতে বলেন, আর মানুষ কি করছে? একজন মানুষ হিসাবে আমাদের দায়িত্ব কি? ইসলাম কি বলে? যা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

দাসত্ব মানে কি?
দাস মানে কারও ক্রয় করা গোলাম। যার কাজ হচ্ছে, মালিক যা বলবে তাই পালন করবে। দাস যদি মালিকের কথা মতো হুবহু কাজ করে তবেই তার জন্য দাসত্ব শব্দটির ব্যবহার যথাযোগ্য। আর যদি মুনিবেরর দাস হওয়া সত্বেও তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন না করে নিজের মন মর্জি মত চলে তবে তার ফয়সালা কি হতে পারে। মুনিবের আচার-ব্যবহার তার সঙ্গে কি রকম হবে। এ থেকেই আমরা অনুমান করতে পারি।

দাসত্ব মানে হচ্ছে আল্লাহর বিধানকে জানা এবং মানা। শুধুমাত্র আল্লাহকে প্রভু, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল, আল কুরআনকে ধর্মগ্রন্থ এবং চাকরি-বাকরি, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু ফেলে দিয়ে মসজিদে বসে নামাজ পড়তে থাকা, তাসবিহ-তাহলিল করার নামই দাসত্ব বা আত্মসমর্পনকারী নয়। মূলত মুসলমান হচ্ছেন তিনিই যিনি আল্লাহর রঙে নিজেকে রাঙিয়েছেন, দুনিয়ার অন্য যে কোন কিছুর চাইতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে প্রাধান্য দিয়েছেন আখিরাতের জীবনকে প্রকৃত মঞ্জিল নির্ধারণ করেছেন, অহরহ মানুষকে ডাকছেন সত্য ও সুন্দরের দিকে। আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা হচ্ছো সর্বোত্তম জাতি, তোমরা মানুষকে ন্যায়ের দিকে ডাকবে এবং অন্যায় থেকে বিরত রাখবে, আর কেবল মাত্র আল্লাহর উপরই ঈমান রেখে চলবে। (সূরা আলে ইমরান-১১০)। অর্থাৎ মানুষ যখন যেখানে যে দায়িত্বে থাকবে, তা হোক পরিবারে, চাকরিতে, ব্যবসায়, বাণিজ্যে, সর্বক্ষেত্রেই সৎ, সত্য ও ন্যয়ের ওপর থেকে সব কাজে আল্লাহর দৃষ্টি সীমার মধ্যে নিজের অবস্থান মনে করে যথাযথ দায়িত্ব পালনই হচ্ছে দাসত্ব।

আমাদের দায়িত্বের ধরন হওয়া চাই-
ক. আমি নামাজ পড়ছি কার জন্য? আল্লাহর জন্য না লোক দেখানো জন্য তা আল্লাহ দেখছেন এবং জানেন
খ. আমি কুরআন তিলাওয়াত করছি কি জন্য কি উদ্দেশ্যে তাও আল্লাহ অবগত আছেন
গ. আমি অফিসে চাকরি করছি, আমার ওপর যথাযথ দায়িত্ব পালন করছি কি করছি না আল্লাহ দেখছেন
ঘ. আমি ব্যবসা করছি, ওজনে সঠিক দিচ্ছি কিনা, পক্ষ-বিপক্ষ চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছি কি করছি তাও  না আল্লাহ দেখছেন
ঙ. এক কথায় সব কাজে আল্লাহ বিধান অনুযায়ী যথাযথ দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কিনা, যদি জীবনের সর্বক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা হয় তবেই কেবল তা হবে ইবাদত বা দাসত্ব। যখনই মানুষ যথাযথ কাজ সঠিক নিয়মে পালন করবে না তখনই আর দায়িত্ব পালন হবে না। মানুষ হবে সীমালংঘনকারী। মানুষ যখন দুনিয়ার কাজ করবে; প্রত্যেক কাজে মানুষ আল্লাহর উপস্থিতি ও আল্লাহর অর্পিত দায়িত্ব মনে করেই কাজ করবে তবেই মানুষের জীবনের উন্নতি সাধিত হবে। মানুষ খুঁজে পাবে শান্তি পথ।

পক্ষান্তরে আল্লাহর নিয়ম লঙ্ঘন করাই দুনিয়ার জীবনে মানুষের বিপর্যয়ের মূল কারণ। আর এই পথভোলা, আত্মবিস্মৃত মানবতাকে সঠিক পথের দিশা দেখানোর দায়িত্ব প্রত্যেক মুসলমানের উপরই বর্তায়। আল্লাহর বিধান মেনে চলার দিকে মানব সমাজকে আহ্বান জানানো এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁর পূর্ণ অনুশীলন ও মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো্ই হচ্ছে ইসলামের মৌলিক দায়িত্ব।

মুসলিম জাতি এ দায়িত্ব যতদিন পালন করছে ততদিন মানুষ হিসেবে তারা ছিল মর্যাদার আসনে সমাসীন। জাতি হিসেবে ছিল বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। যার প্রমাণ অল্প সংখ্যক মুসলমান শাসন করেছে সারা বিশ্বকে। যখনই তারা এ দায়িত্ব থেকে গাফেল হয়েছে তখনই তাদের উপর নেমে এসেছে বিপর্যয়, পরাধীনতার গ্লানি, নির্যাতন, অপমান আর লাঞ্ছনা। যা আমাদের জন্য শিক্ষা। এ যেন আল কুরআনের সেই বাণীরই বাস্তব চিত্র : “আর তোমরা যদি তা মেনে না চলো তবে তোমাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার জীবনে অপমান, লাঞ্ছনা, আর আখেরাতের কঠিন শাস্তি এবং তোমাদেরকে অন্য জাতির পদানত করে দেয়া হবে” (সূরা আত তওবা-৩৯)।

ইসলামের আদর্শ-
আল্লাহ দেয়া বিধান এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো জীবন পদ্ধতিই হচ্ছে ইসলাম। যা সমগ্র মানব জাতির একমাত্র নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানবতার একমাত্র মুক্তির সনদ। ইসলাম প্রচলিত অর্থে নিছক কোন ধর্মের নাম নয়; বরং মানুষের জন্মের পর দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত অর্থাৎ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডল এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়সহ দুনিয়াবী সব সমস্যার সমাধান, জীবন জিজ্ঞাসার জবাব এবং আখেরাতে মুক্তির একমাত্র নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা হল ইসলাম।

আর ইসলামের অনুসারীদের এ কথাগুলো হৃদয়ে স্থান করে নিতে হবে-
ক. সমগ্র সৃষ্টি জগতই মহান আল্লাহর সৃষ্টি
খ. তিনি নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক
গ. তিনি জীবন মৃত্যুর মালিক
ঘ. তিনিই রিজিকদাতা
ঙ. তিনিই বিধানদাতা
চ. তিনি সব বিচারিক ব্যবস্থার সঠিক ফয়সালাকারী
ছ. সৃষ্টির ইবাদত কেবল মাত্র তাঁরই প্রাপ্য, অনু-পরমানু থেকে শুরু করে সৃষ্টি জগতের প্রতিটি সৃষ্টি তাঁর নির্দেশই মেনে চলে এবং তার সীমাহীন ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের কারণেই সমগ্র মহাবিশ্বের পরিচালনায় কোন বিশৃঙ্খলা ও অনৈক্য নেই। এ বিশ্বাসই মানুষকে দুনিয়ার কল্যান এবং আখিরাতের মুক্তি দিতে পারে।

তাই মানুষের উচিত স্রষ্টার দেয়া বিধানগুলো হৃদয়ে আঁকড়ে ধরা, জীবনের সর্বক্ষেত্রে  তা পালন করে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামের সুমহান আদর্শ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য তুলে ধরা। আল্লাহ আমাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করার, আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন গড়ার, ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসারি হওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।

জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।