যশোরের ১৬ হাজার মানুষকে পথে বসালো এহসান সোসাইটি


প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৫

যশোরে এহসান ইসলামী মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ এবং এহসান এস রিয়েলস্টেট সোসাইটিতে বিনিয়োগকৃত প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ফেরত না পেয়ে ১৬ হাজার গ্রাহক পথে বসেছেন। একই সাথে টাকা আদায়ে কর্মকর্তাদের নামে ১৮টি মামলা করায় তারা একের পর এক ঝক্কি ঝামেলায় পড়ছেন। সর্বশেষ সোমবার টাকা আদায়ে গ্রহকরা যশোর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাড়ি ফেরার পথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া মফিজুর রহমান ইমন নামে একজনকে মোবাইল ফোনে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে দিশেহারা গ্রাহকরা এখন কপাল চাপড়াচ্ছেন।

সূত্র মতে, গত কয়েক বছর আগে যশোরের এহসান ইসলামী মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ এবং এহসান এস রিয়েলস্টেট সোসাইটি বিনিয়োগে অতিরিক্ত লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেয়।  এতে যশোরের প্রায় ১৬ হাজার গ্রাহক প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।  প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠান দুই-একবার লভ্যাংশ দিলেও পরে কথা রাখেনি বলে গ্রাহকদের অভিযোগ।  এক পর্যায়ে গ্রাহকরা টাকা আদায়ে তাদের চাপ দিলে অনেক কর্মকর্তা গা-ঢাকা দেন। এ পরিস্থিতিতে কর্মকর্তাদের নামে মামলা করেন প্রতারিত গ্রাহকরা।  তারা একে একে কোম্পানির কর্মকর্তাদের নামে ১৮টি মামলা করেন। সর্বশেষ ২৬ জুলাই সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের বসু মিয়ার ছেলে হানিফ মিয়া বাদী হয়ে এহসান সোসাইটির সভাপতি ও প্যানেল এমডি মুফতি ইউনুছ আলী, পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম, আতাউল্লাহ, আইউব আলী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুনায়েদ, পরিচালক মনিরুজ্জামানসহ ১৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

মামলার বাদী হানিফ মিয়া অভিযোগ করেন, ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি দুই লাখ টাকা জমা করেন।  জমা টাকার লভ্যাংশ হিসেবে প্রতিমাসে তাকে তিন হাজার ২’শ টাকা দেয়ার কথা।  কিন্তু লভ্যাংশ ও বিনিয়োগের কোনো টাকাই এখন ফেরত পাচ্ছেন না।

এদিকে, টাকা ফেরত দাবিতে গ্রাহকরা মামলার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, থানা ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছেন।  কিন্তু টাকা উদ্ধারের কোনো কূল কিনারা হয়নি।  উপরন্তু এসব করে তারা হামলা ও হুমকির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২২ জুলাই এ ধরনের অভিযোগ কোতোয়ালি মডেল থানায় এহসান মাল্টিপারপাস সোসাইটির শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে মফিজুল ইসলাম ইমন এ মামলা করেন।

আর সোমবার টাকা ফেরত দাবিতে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন শেষে বাড়ি ফেরার পথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া মফিজুর রহমান ইমনকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়া হয়।  

ইমন জানান, তার বাবা ১৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা জমা দেন।  এ টাকা আদায়ে তিনি তিনটি মামলা করেছেন।  এরপর থেকে তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে।  সোমবারও তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।  অব্যাহত হুমকিতে তিনি জীবনাশংকায় ভুগলেও প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা রাখছে না।

তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে টাকা পাওয়ার আশা ছেড়ে এখন জীবন বাঁচানোর জন্য মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলন স্থগিত করা ছাড়া উপায় নেই।

এদিকে, দড়াটানা মাদ্রাসার পরিচালক অভিযুক্ত মাওলানা নাসিরুল্লাহ দাবি করেছেন, তিনি এহসান মাল্টিপারপাস সোসাইটি কোম্পানির সাথে জড়িত নন।  তার ভাই জড়িত। কিন্তু তাকে ফাঁসানোর জন্য তার নামে একাধিক মামলা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি বলেন, মামলার আসামিরা অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে।  অনেকে জামিনে রয়েছে। গ্রাহক মফিজুর রহমান ইমনকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি দেখবেন বলে ওসি জানিয়েছেন।

মিলন রহমান/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।