রূপকথার রাজপুত্র নন সৌদি যুবরাজ
বিনোদন খাতে হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে সৌদি। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আয়োজিত এক সম্মেলনে কয়েকটি বিষয় বারবার তুলে আনা হয়েছে। তা হলো পরিবর্তন। সম্প্রতি ক্রাউন প্রিন্সের নেতৃত্বে এক নতুন সৌদি আরব নিয়ে প্রচারণা চলছে।
সম্মেলনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বয়স ৩০ এর নিচে। আর তারা বিনোদনের খোঁজে মরিয়া। দেশের বাইরে গিয়ে তারা বহু পয়সা খরচ করে।
কিন্তু সৌদি আরব নিজের দেশেই তাদের সেই সুযোগ করে দিতে আগামী পাঁচ বছরে পশ্চিমা বিনোদনের আর গ্ল্যামারের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করছে। সৌদি আরব বিনোদনে বিশাল বিনিয়োগ করছে এমন খবর বের হওয়ার পর থেকে হলিউড তার ভাগ পেতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছে।
যুবরাজ মোহাম্মদ সম্মেলনে গিয়েছিলেন ফিল্ম স্টুডিও হিরো ভেনচারের প্রধান নির্বাহী রিক লাইখট। তিনি বলেন, ‘আমরা মার্ভেল কমিকস এর বিনোদন নিয়ে সৌদি আরব যেতে চাই। আশা করছি এ বছর শেষ হওয়ার আগেই সেই সুযোগ আমরা পাবো। যুবরাজ সালমান আমাদের জন্য এক দারুণ আয়োজন করেছেন।’
কিন্তু রাজপুত্র কথাটা শুনলেই রূপকথার দৃশ্য ভেসে উঠলেও ক্রাউন প্রিন্স একেবারেই তেমন কেউ নন। তার হলিউড ভ্রমণের পুরো সময়টা জাঁকজমকের পাশাপাশি এমন ক্যাম্পেইনও চলেছে। যুবরাজের আনুষ্ঠানিক বৈঠকগুলো যেসব যায়গায় হয়েছে সেসব ভেন্যুর বাইরেই নারীবাদী ও যুদ্ধ বিরোধী সংগঠনগুলোকে যুদ্ধবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা ক্যালিফোর্নিয়ায় সৌদি যুবরাজের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা গান গেয়ে গেয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের জানাতে চেয়েছেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হামলায় ইয়েমেনে কিভাবে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ২০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। খাবারের অভাবে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে ইয়েমেন।
সৌদি আরব যে অস্ত্র দিয়ে তাদের হামলা চালাচ্ছে তার একটি বড় অংশ ক্রয় করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। অস্কার বিজয়ী শোরেহ আগদাশলু রয়েছেন এই ক্যাম্পেইনের সমর্থকদের মধ্যে।
তিনি বলেন, ‘ইরানের সাথে সৌদি আরবের যে অর্থহীন বিরোধ তার বলি হচ্ছে ইয়েমেনের হাজার হাজার মানুষ। এই বিরোধের জেরে বহু ইয়েমেনি তাদের বাবা-মা আর সন্তান হারিয়েছেন। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে, জীবিকা হারিয়েছে। সৌদি যুবরাজ তার সংস্কার কাজ ইরান দিয়ে শুরু করলে ভালো হতো।’
তিনি আরো বলেন, হলিউড রাজকন্যা আর রাজপুত্র খুব ভালবাসে। তারা নিজেরাই এমন রাজপুত্র রাজকন্যার জন্ম দেয়। যুবরাজ যেসব সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমরা আশা করি তিনি তা করে দেখাবেন। তার বয়স মোটে ৩২ বছর এবং সে খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তার ক্ষমতা আর অর্থ দিয়ে তিনি অনেক কিছু করার সামর্থ্য রাখেন।
সৌদি আরব সম্প্রতি দেশটিতে সংস্কার নিতিমালা হাতে নিয়েছে আর সেটির মূল নকশার পেছনে রয়েছেন যুবরাজ সালমান। কিন্তু সিনেমা হল আর বিনোদন কেন্দ্র চালুর মাধ্যমে সৌদি আরব তার কট্টরপন্থী সামাজিক রীতিতে কতটা সংস্কার আনবে সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
টিটিএন/জেআইএম