দিনাজপুরে মাত্র একটি সিনেমা হল


প্রকাশিত: ০৮:৪৫ এএম, ২৭ জুলাই ২০১৫

দর্শকের অভাবে লোকসান গুণতে গুণতে বন্ধ হয়ে গেছে দিনাজপুর শহরের ৮টির মধ্যে ৭টি সিনেমা হল। একমাত্র চালু সিনেমা হলটিও কয়েক মাসের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে।

টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিন ১৫/২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শন হয়ে থাকে।  অন্যদিকে, পকেটে পকেটে মোবাইল ফোনে সিনেমা এবং পাইরেসির কারণে দেশের সিনেমা হল ব্যবসা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।  এখন হলগুলোতে দর্শক শূণ্যের কোঠায় ফলে হল মালিকদের গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের লোকসান।  আর এ পেশার সঙ্গে জড়িত শত শত কর্মচারী বেকার হয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।

দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় ২৫টি সিনেমা হলে কর্মচারীর সংখ্যা ছিল হাজার খানেক।  তার মধ্যে দিনাজপুর শহরেই ছিল ৮টি সিনেমা হল।  হলগুলো হলো, মডার্ণ, লিলি টকিজ, বোস্তান, চৌরঙ্গী, কুঠিবাড়ী, ছায়া, জুয়েল ও সাগর।  এরমধ্যে একমাত্র মডার্ণ সিনেমা হলটি চালু রয়েছে।  আর চালু চৌরঙ্গী বন্ধের পথে।  বাকিগুলো আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।  উপজেলার সিনেমা হলগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ।

সিনেমা দর্শক বেলাল উদ্দিন, রফিকুল ইসলামসহ অনেকে জানান, ভারতীয় চলচ্চিত্রের উৎকর্ষতার সামনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র টিকে থাকতে পারছে না।  তরুণ প্রজন্মের পছন্দকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা, হিন্দি ও তামিল চলচ্চিত্র।  আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ছাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ওই ছায়াছবিগুলোকে।  বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের কাছে আকর্ষণীয় ও বিনোদনের খোরাক হয়ে যায় সেই চলচ্চিত্রগুলো।  এ কারণেই বাংলাদেশে হলগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।  নিম্নমানের ছবি তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

একমাত্র চালু থাকা দিনাজপুরের মডার্ণ সিনেমা হল মালিক মো. শাহেবজাদা পারভেজ বলেন, বাংলাদেশের সিনেমা এখন মান সম্পন্ন নয়।  চলচ্চিত্র নির্মাণকারীরা দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারছে না বিধায় দর্শক হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এখনও ভালো চলচ্চিত্রের দর্শক আছে।  তারা ভালো ছবি পেলে হলে এসে ছবি দেখতে রাজি।  কিন্তু ছবি নির্মাণকারীরা দর্শকদের সাথে প্রতারণা করে টাকা আয় করতে চান।

শাহেবজাদা পারভেজ এই সিনেমা হলে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাই আগামী রমজান ও কোরবানি ঈদের মাঝামাঝি সময় এই হল বন্ধ করার চিন্তা ভাবনা করছেন।

এদিকে বেকার হল শ্রমিকরা এখন কেউ কাপড় ব্যবসা, ফুচকা ও চটপটির দোকান, ফুটপাতে ডিম বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে অনেককে।  অন্যদিকে মালিকরা হলগুলো ভেঙে ফেলে নির্মাণ করছেন মার্কেট, সুপার মার্কেট এবং নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

মডার্ণ সিনেমা হল ১৯৫৭ সালে নির্মাণ করেন শাহেবজাদা পারভেজের বাবা এম, এস জোহা। এই হলটি তৈরি করার পর থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভালো ব্যবসা ছিল।  তখন দর্শক ছিল প্রচুর।  কিন্তু ১৯৮০ সালের পর থেকে চলচ্চিত্রের মান নেমে যায় এসময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের চরম অবনতি ঘটে।

হল কর্মচারী জহির উদ্দিন বুলু জানান, তিনি এখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে চাকরি করেন।  এখন হলে দর্শক নাই।  হলের মায়ার জন্য ঘুরে ফিরে এই হলেই আসি।  সংসারের অভাব অনটন লেগেই আছে।  কিন্তু এ বয়সে কোনো কিছু করার উপায় নাই।

আর্থিক দৈন্যদশার কারণে হল মালিকরা হল মেরামত, ডেকোরেশন আর রং আভিজাত্যের উন্নয়নে কোনো অর্থ খরচ করেন না।  ফলে ভাঙা সিট আর ছাড়পোকা ভরা চেয়ারের গদির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।  তাছাড়া পরিবারের সকলকে নিয়ে হলে বসে ছবি দেখারও কোনো পরিবেশ এখন আর নেই।

এমদাদুল হক মিলন/এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।