বাক্স বন্দী ছোট পর্দার ঈদ
ঈদের উৎসবে দর্শকদের বৈচিত্রময় আনন্দ দিতে বাহারী আয়োজন সাজায় টিভি চ্যানেলগুলো। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও ব্যতিক্রম ছিলো না। তবে হতাশার কথা হলো এবারেও মানহীন গল্পের নাটক-টেলিফিল্ম ও অনুষ্ঠানের আধিক্য ছিলো। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের বিড়ম্বনায় এবারেও বিরক্ত হয়েছেন দর্শকেরা।
তবুও বেশ কিছু নাটক মন ভরিয়েছে দর্শকদের। অন্যান্যবারের মতো এবারেও দেখা গেছে জাহিদ হাসানের নাটকের আধিপত্য। তবে তাদের বেশিরভাগই ছিলো কমেডি নাটক। যার ফলে জাহিদ হাসানের মতো জাঁদরেল অভিনেতার বৈচিত্রতা মিস করেছেন দর্শকরা। পাশাপাশি এবারও মোশাররফ করিম ছিলেন সর্বাধিক নাটক-টেলিছবির অভিনেতা। তার হাস্যরসাত্মক অভিনয় মুগ্ধ করেছে নাট্যামোদীদের। আর এবারের ঈদে দর্শকদের জন্য বিশেষ উপহার ছিলো চিত্রনায়ক রিয়াজের নাটক-টেলিফিল্মগুলো। এই অভিনেতা এবার কাজ করেছেন গল্পের মান যাচাই করে। তারিনের বিপরীতে ‘তেল’ টেলিফিল্ম ও লাক্স সুন্দরী বাঁধনের সাথে ‘ফুসমন্তর’ ইত্যাদি নাটকগুলো মুগ্ধ করেছে।
এছাড়াও ঈদে সরব ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, মাজনুন মিজান, সজল, অপূর্ব, রওনক হাসান, সাব্বির, মিশু সাব্বির, ফজলুর রহমান বাবু, আ খ ম হাসান, তৌসিফ, ইরেশ যাকের, আনিসুর রহমান মিলন ও অন্যান্যরা। অভিনেত্রীদের মধ্যে সুবর্ণা মুস্তাফা, মৌ, তিশা, তারিন, শখ, রিচি, বাঁধন, শবনাম ফারিয়ারা ছিলেন এগিয়ে।
তবে ঈদে নির্মিত বেশ কিছু নাটকের সিক্যুয়েল হতাশ করেছে। তার মধ্যে সিকান্দার ব্ক্স’র নতুন সিক্যুয়েলটিতে জোর করে হাসানোর প্রচেষ্টা ছিলো প্রকট। সেইসাথে প্রথমবারের মতো জমে উঠেনি জাহিদ হাসানের ‘ফরমাল-ইন অ্যাকশন’। এছাড়াও ‘যমজ ৩’, ‘আলাল-দুলাল ষষ্ঠ পত্র’ সিক্যুয়েলগুলোও মন ভরাতে পারেনি দর্শকদের।
সবকিছু ছাপিয়ে এবার ঈদ অনুষ্ঠানে আলোচিত হয়েছে নতুন একটি বিষয়। সেটি হলো বিদেশি নামে চড়ে দেশি নাটকের ফ্যাশন দেখা গেছে এবার। বেশ কিছু নাটকের নাম রাখা হয়েছে ইংরেজী শব্দে-যা দৃষ্টিকটু। তারমধ্যে ‘লাইক অ্যান্ড কমেন্টস’; ‘এ্যাংরি বার্ড’; ‘প্লেব্যাক’; ‘লাভ স্টেশন’; ‘টম অ্যান্ড জেরি’; ‘ডেসটিনেশন’; ‘হোপলেসম্যান’; ‘ম্যাচিউরড’; ‘নাসের গ্যাং ০০৯’; ‘সুইচ অফ’; ‘ফরমাল-ইন-অ্যাকশন’; ‘পাপারাজ্জি’; ‘স্টোরি বোর্ড’; ‘পোট্রেট’; ‘এয়ার বেন্ডার’; ‘দ্য ব্রেকআপ’; ‘ওয়ান ফাইট ডে’ উল্লেখযোগ্য।
পিআর প্রোডাকশনের ঈদ আয়োজন
গেল ঈদে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালায় বৈচত্রিতা নিয়ে হাজির ছিলো পিআর প্রোডাকশন। তারমধ্যে অনিরুদ্ধ রাসেল এসএ টিভির জন্য নির্মাণ করেছেন ‘নেয়ামতের কেয়ামত’ নামের ৬ পর্বের ধারাবাহিক। এসএ টিভির জন্য দীপঙ্কর দীপন নির্মাণ করেছেন ‘কারিনার পাঙ্খা’ টেলিফিল্ম ও আশুতোষ সুজন নির্মাণ করেছেন ‘কোথায় পাব তারে’ একক নাটক।
পিআর প্রোডাকশানের ব্যানারে চ্যানেল নাইনে প্রচার হয়েছে ‘ভালোবাসার ফাঁদ’ ও ‘ত্রিকোনমিতি’ নামের দুটি টেলিছবি ও ‘ঢাকা মেট্রো গ’, ‘স্বপ্নকন্যা’, ‘গল্পটা সন্দেহজনক’ এবং ‘৩৬০ আওয়ার’ নামের চারটি একক নাটক। একই ব্যানারে এশিয়ান টিভিতে প্রচার হয়েছে ‘টার্গেট ০০৭’, ‘ফিডব্যাক’ ও ‘কোনো ব্যপার না’ শিরোনামের ৭ পর্বের ধারাবাহিক। এছাড়া ‘রাশিম্যান’ ও ‘বন্ধুত্বের আড়ালে’ নামের দুটি একক নাটকও প্রচার হয়েছে।
অন্যদিকে বৈশাখী টিভিতে ‘সুপিরিওর কমপ্লেক্স’, ‘ঘোর’ ও ‘শেফালী’ নামের নাটক ও জিটিভিতে প্রচার হওয়া ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’, ‘লন্ডন ড্রিমস’, ‘সিল্ক সিটি’ ও ‘প্রেম কানন’ নামের নাটকগুলো বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এবং কাজল আরেফিন অমির পরিচালনায় ইটিভিতে ঈদের তৃতীয় দিন প্রচার হওয়া ‘ভ্রমী’ টেলিছবিটিও আলোচিত হয়েছে। এখানে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী ও মৌটুসী বিশ্বাস।
এছাড়াও এই ঈদে আরটিভিতে প্রচার হয়েছে ব্রেভার, প্রাণ ফ্রুটো, ম্যাক্স কোলা, চিয়ার আপ ও প্রাণ আপ নিবেদিত বেশকিছু বিরতিহীন নাটক।
প্রসঙ্গত, নাটক-টেলিফিল্মের পাশাপাশি এবারের ঈদে দর্শকদের ভিন্ন মাত্রার বিনোদন দিয়েছে বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
এলএ/পিআর