‘রাখাইনে বিশৃঙ্খলা তৈরির পেছনেও ফেসবুক’
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইনে গত বছরের শেষের দিকে ‘বিশৃঙ্খলা’ তৈরির জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রোহিঙ্গা সঙ্কটের শুরুতেই দেশটিতে ব্যাপকভাবে হিংসাত্মক ও ঘৃণামূলক বার্তা ছড়ালেও ফেসবুক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে এক বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে।
মিয়ানমারে বিদ্বেষমূলক বার্তা ছড়াতে ফেসবুক মূল ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ উঠার পর বিশ্লেষকরা তাদের দাবির স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেছেন।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জেরে ব্যাপক সামরিক অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়েছে।
ডিজিটাল গবেষক ও বিশ্লেষক রেমন্ড সেরাটো মিয়ানমারের উগ্রপন্থী জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ গোষ্ঠী মা বা থা গ্রুপের সমর্থকদের প্রায় ১৫ হাজার ফেসবুক পোস্ট বিশ্লেষণ করেছেন। রাখাইনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার এক বছরের বেশি সময় আগে মা বা থা গ্রুপের সদস্যরা প্রথম রোহিঙ্গাবিরোধী ফেসবুক পোস্ট দেয় ২০১৬ সালের জুনে।
রোহিঙ্গাবিরোধী পোস্ট দেয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায় পরের বছর। ২০১৭ সালের ২৪ ও ২৫ আগস্ট চূড়ান্ত মাত্রায় বিদ্বেষ ছড়ায়। ওইদিন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরসার সদস্যরা সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এই হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাবিরোধী ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে। যার ফলে মিয়ানমারের সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।
সেরাটোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোহিঙ্গাবিরোধী কট্টরপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী মা বা থার ৫৫ হাজার সদস্য রয়েছে। ওই সময় এই গোষ্ঠীর সদস্যদের ফেসবুক পোস্ট ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
সেরাটো বলেন, ‘মিয়ানমার সংঘাতে সমাজের বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে স্পষ্টভাবে সহায়তা করেছে ফেসবুক।
তিনি বলেন, ‘যদিও অতীতে ভুল তথ্য এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্য-বিবৃতি ছড়াতে ফেসবুককে ব্যবহার করা হয়। তবে (আরসার) ওই হামলার পর এটি আরো ব্যাপক আকারে ব্যবহৃত হয়।’
ফেসবুকের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে সহিংসতা ছড়ানোর এই অভিযোগ এমন এক সময় এল যখন সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় এই মাধ্যমটির বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, ভুয়া খবর ও ঘৃণাত্মক বার্তা ছড়ানোর জেরে টালমাটাল হয়ে উঠেছে।
মিয়ানমারে ঘৃণাত্মক বার্তা নিয়ে দুই বছর ধরে গবেষণা করেছেন ইনস্টিটিউট অব ওয়ার অ্যান্ড পিসের বিশ্লেষক অ্যালান ডেভিস। তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাসের আগে তিনি ফেসবুকে যেসব পোস্ট দেখেছেন সেসবের অধিকাংশই ছিল পরিকল্পিত, সংগঠিত ও ঘৃণাত্মক ও সামরিকী ধাঁচের।’
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।
এসআইএস/আরআইপি