পাকিস্তানের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের সংবাদ উপস্থাপিকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৭ পিএম, ২৭ মার্চ ২০১৮

এতদিন সবাই তার দিকে আড় চোখে তাকাতেন। আড়ালে বা সামনে এসে বাজে মন্তব্যও করতেন। তার চাল-চলন, কথাবার্তা নিয়ে হাসিঠাট্টা করতেন। এক কথায় তিনি ছিলেন অন্যদের কাছে হাসির পাত্র। খবর বিবিসি।

কিন্তু নিজের পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে ইতিহাস গড়লেন তিনি। পাকিস্তানের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে নিজের সফল যাত্রা শুরু করলেন মারভিয়া মালিক (২১)। তবে এখানেই সব প্রাপ্তি নয় বরং তাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে বলেই মনে করেন এই সংবাদ উপস্থাপিকা।

পাকিস্তানের বেসরকারি টিভি চ্যানেল কোহিনুর নিউজে শনিবার প্রথম তিনি সংবাদ উপস্থাপনা করেন। তারপর থেকেই যেন আচমকা বদলে যেতে শুরু করেছে চারপাশ। অনেকেই খুব আগ্রহ নিয়ে তার উপস্থাপনা দেখেছেন। অবশ্য এর মাত্র একদিন আগেই পাকিস্তান ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিলের এক ফ্যাশন শো'তে ক্যাটওয়াক করেন মারভিয়া।

মারভিয়া জানান, তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ায় পরিবারের কেউই তাকে কোনওদিন মেনে নিতে পারেননি। যখন তিনি দশম শ্রেনিতে পড়েন তখন তাকে বাড়ি থেকেই বের করে দেওয়া হয়। অনেক চেষ্টার পর ছোট একটা সেলুনে কাজ পান তিনি। তা দিয়েই খুব কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। পরে টাকা জমিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। নিজের চেষ্টা ও অদম্য মনোবলেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন মারভিয়া।

তিনি পাকিস্তান ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল ফ্যাশন শোতে অংশ নেওয়া প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের মডেল। ২০০৯ সালে পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পরিচয়পত্র দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ২০১৭ সালে তৃতীয় লিঙ্গ ক্যাটেগরিতে প্রথম পাসপোর্ট ইস্যু হয় পাকিস্তানে। গত বছর থেকে আদমসুমারিতেও জায়গা করে নিয়েছেন তারা।

চলতি মাসের প্রথমেই তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনের সুরক্ষায় সিনেটে একটি বিল আনা হয়। এই বিল পাশ হলে আর কোনও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে কোনওরকম হেনস্তা শিকার হতে হবে না।

পাক সরকারের এমন পদক্ষেপে বেশ খুশি মারভিয়া। সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে তার মনে হচ্ছে এই মানুষগুলোকে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার সরকারি চেষ্টা অনেকটাই সফল হচ্ছে। কিন্তু বিল এনে আইন করে পুরো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলা সম্ভব নয় বলেও জানান মারভিয়া।

তিনি বলেন, পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে এই পরিবর্তন। প্রত্যেক বাবা-মাকে বোঝাতে হবে, সন্তান যদি তৃতীয় লিঙ্গের হয় তাতে লজ্জার কিছু নেই। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির লোকেরাই এই মানুষগুলোকে পরিত্যাগ করে। তারপর তাদের ভিক্ষাবৃত্তি, নাচ দেখানো বা চাদাবাজি করে অর্থ উপার্জন করতে হয়।

মারভিয়া মালিক বলেন, সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে যোগ দেয়ার পর তিনি অনেক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। অনেকেই তাকে ফোনকল এবং ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি বেঁচে থাকার জন্য অবিরত সংগ্রাম করে চলেছেন। সেই সংগ্রাম সফল হয়েছে।

টিটিএন/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।